মামুনুল হক সাহেবের খাটিয়া সমাচার ও বাস্তবদর্শন

আবদুর রহমান গিলমান।

গতকাল আল্লামা আহমদ শফী সাহেব রহ. এর জানাজায় জামায়াত কর্মীদের খাটিয়া বহন নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। বিতর্কিত বিষয়ে আমি সাধারণত পোস্ট করিনা। দূরে থাকার চেষ্টা করি। তারপরও যেহেতু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একটি পয়েন্টে আমি নিজে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সে বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে- তাই আমি আমার দেখা বাস্তব বিষয়টি তুলে ধরছি।

জামায়াতে ইসলামীর ভাইয়েরা কারো খাটিয়া বহন করা- এটি কোন দোষের কিছু নয়। একজন মুসলমান অপর মুসলমানের জানাজায় অংশগ্রহণ করা, কাফন দাফনে শরিক হওয়া- এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এখানে বিতর্কের জায়গা হল খাটিয়াটা “কাওমি মাদ্রাসার” প্রাণকেন্দ্র “হাটহাজারী মাদ্রাসা”র মুহতামিম “আল্লামা আহমদ শফী” এর খাটিয়া। বিতর্কের আরেকটি বড় পয়েন্ট হল- কওমীদের থেকেই কেউ এই সুযোগ করে দিয়েছে।

যাই হোক- বিতর্কের এই জায়গাগুলো নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি না। এখানের আলোচনা অনেক গোড়ার এবং গভীরের। আমি আমার বিষয়ে আসি।

জামায়াতে ইসলামীর লোকদেরকে খাটিয়া বহনের সুযোগ সৃষ্টির প্রশ্নে সন্দেহের তীর উঠেছে আল্লামা মামুনুল হক সাহেবের দিকে। কেউ কেউ জানাজায় আসা জামায়াত নেতাদের সাথে মামুনুল হক সাহেবসহ রাবেতার দায়িত্বশীলদের দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার প্রমাণও দেখিয়েছেন। ওই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে মামুনুল হক সাহেব তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এই বিষয়ে ওয়াজাহাত করেছেন। ওয়াজাহাত করতে গিয়ে সেখানে তিনি সরাসরি ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকদেরকে দায়ী করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই নাকি জামায়াত নেতারা এই সুযোগ পেয়েছেন।

এখানে প্রসঙ্গত আর একটি কথা বলে রাখি- খাটিয়া ইস্যু নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের হৈচৈ করার কিছু নেই। ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোন মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন নয়। কওমি কোন ইস্যু আসলেই সবাই ঝাপিয়ে পড়তে হবে- এটা একেবারেই নিষ্প্রয়োজন। কওমি অঙ্গনকে রক্ষা করার জন্য সেখানের শীর্ষ ওলামায়ে কিরাম আছেন।

যেটা বলতে চাচ্ছিলাম- মামুনুল হক সাহেব বলেছেন- ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে জামায়াতের লোকেরা খাটিয়া বহনের সুযোগ পেয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমি বলব- হযরতের কথাটি একেবারে অসত্য। মিথ্যা বলছি না এজন্য- হয়তো তিনি না জেনে বলেছেন। বাস্তব কথা হলো- গতকাল ঘটনাক্রমে আমি জানাজার একেবারে কাছেই ছিলাম। ডাকবাংলো গেটের ১০/১৫ হাত পূর্বে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। DBC NEWS এর লাইভে কাঁদে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাই আমি।

আল্লামা আহমদ শফীর জানাজা বিতর্কে

আমার সাথে ছিল আমার ছাত্র হেফাজত উল্লাহ রাসেদ। দুপুর ১২ টা থেকে জানাজা শেষ পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম। হুজুরের লাশবাহী গাড়ির সামনে বসে মামুনুল হক সাহেব এবং হাসান জামিল সাহেব যখন হাসতে হাসতে ডাক বাংলোর ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তখন আমি পাশেই ছিলাম। মামুন সাহেবের হাসিটা তখন অনেক চমৎকার লাগছিল। মনে হচ্ছিল যেন কোন “রাজকীয়” মেহমান ডাকবাংলোয় প্রবেশ করছেন।

যাই হোক- দুপুর ১২ টা থেকে জানাযা শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর এপ্রন পরা কোন স্বেচ্ছাসেবক সেখানে আমি দেখিনি। ডিবিসি নিউজ এর ভিডিওটি দেখলেও যে কেউ বলতে পারবে সেখানে এমন কাউকে দেখা যাচ্ছে কিনা। ইসলামী আন্দোলনের স্থানীয় একজন দায়িত্বশীল- যিনি স্বেচ্ছাসেবক বন্টনের দায়িত্বে ছিলেন- তিনিও দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে- সেখানে ইসলামী আন্দোলনের কোনো স্বেচ্ছাসেবক সেখানে ছিল না।

হ্যাঁ, লাশবাহী গাড়ি ভেতরে ঢোকার সময় আমি এপ্রন পরা একজন স্বেচ্ছাসেবক দেখেছি। যিনি আল মারকাজুল ইসলামী এর স্বেচ্ছাসেবক। স্পষ্ট নাম লেখা আছে। যিনি ডাকবাংলোর ভেতরেও প্রবেশ করেছেন। শায়খ হয়তো তাকেই ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবক মনে করেছেন।

মামুনুল হক সাহেবের লেখার এই পয়েন্ট টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আশা করি তিনি প্রয়োজনে আরো তাহকীক করে এই পয়েন্টে রুজু করবেন।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%b9%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%af/

0 Comments