পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের স্বাধীনতা আহবান ইমরান খানের

  • এস.কে নাজমুল হাসান   

আজ পাকিস্তানের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস । ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ বেনিয়াদের কাছ থেকে একটি ‘দেশভাগ রূলসের’ মাধ্যমে পাকিস্তান একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তখন পাকিস্তান দু ভাগে বিভক্ত ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তান যা বর্তমান পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে ‘বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত। ‘১৯৭১ সালে নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জুলুম ও নিস্পেষণের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশীরা তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে নেয়।’

দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গুলো নিয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আন্দোলনটি পরিচালনা করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। দীর্ঘ সংগ্রাম ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা তাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৪ ও ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করে ভারত ও পাকিস্তানের হাতে। ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭ অনুসারে ১৫ আগস্টকে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৯৪৮ সালের জুলাইতে পাকিস্তানে প্রথম স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করা হয়, সেখানেও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়। তবে পরবর্তী বছর (১৯৪৯ সাল) হতে ১৪ আগস্ট তারিখটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ তারিখ রাতটি ছিলো ২৭ রমজান ১৩৬৬ হিজরি, এই রাতটিকে মুসলমানগন পবিত্র রজনী হিসেবে বিবেচনা করেন।

পাকিস্তানের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসে সমগ্র জাতিকে অভিনন্দন জানিয়ে ইমরান খান বলেন – এই শুভ দিনটি কায়েদ-ই-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত রাখা ও সমুন্নত রাখার মুহূর্ত। এই দিনটিতে জাতীর সেই সব সন্তানকে শ্রদ্ধা জানানোর একটি উপলক্ষ যাঁরা ভূখণ্ডের পাশাপাশি মাতৃভূমির আদর্শ ও দেশের সীমান্তরক্ষা ও সুরক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন l

এই দিনটি প্রশান্ত হওয়ার এবং এটি একটি উচ্ছাস প্রকাশ করার উপলক্ষ যা আমাদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করে এবং আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, সেই আদর্শগুলিকে কতটা অর্জন করতে পেরেছি আমরা।

আমাদের এ যাত্রার বিগত সাত দশকে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। প্রতিবেশী দেশের শত্রুতা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদের লড়াই এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা থেকে শুরু করে মহামারী আজ, আমরা আমাদের অটল থাকার প্রতিশ্রুতি পুনরুক্তি করি আমাদের বিশ্বাস এবং শৃঙ্খলার” মশাল ধরে দেশের প্রতি আগত প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করি।

আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাথে সাথে এই দেশকে একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রদানের জন্য কাজ করছি যা স্বাধীনতার আদর্শ এবং লক্ষ্যগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করছি যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করে। আমরা আমাদের মডেল হিসাবে “রিয়াসাত-ই-মদীনা” তথা মদিনার শাসনব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছি।

আমরা যখন এই স্বাধীনতা দিবসটি উদযাপন করি, তখন কাশ্মীরে অবরোধে থাকা আমাদের ভাইদের দুঃখ দুর্দশা আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে রেখাপাত করছে। যারা গত এক বছর ধরে ভারত কর্তৃক সামরিক অবরোধের মুখোমুখি। আমরা আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের স্ব-সংকল্পের অধিকারের লড়াইয়ের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সমস্ত ফোরামে অসহায় কাশ্মীরিদের পক্ষে আমাদের কণ্ঠস্বর অব্যাহত রাখব। আমি বিশ্বাস করি যে সাহসী কাশ্মীরিদের সংগ্রাম ও সংকল্প একদিন তাদের আত্ম-সংকল্পের অবিচ্ছেদ্য অধিকারে পৌঁছে যাবে।

ইমরান খান বলেন – আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাশ্মীরে ভারত কর্তৃক গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিজেপি সরকার কর্তৃক গৃহীত আধিপত্যবাদী আরএসএসের আদর্শের দ্বারা উদ্ভূত এই অঞ্চলের শান্তি ও সুরক্ষার হুমকির বিষয়ে বারবার নজর দেওয়ার অনুরোধ করবো।

মহান আল্লাহ তায়ালা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিল রেখে দেশকে পুনর্গঠনের সাফল্যের সাথে আমাদের প্রচেষ্টার সফলতা দিক এই দোয়া করি। একই সাথে আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার সুযোগ দিক এ কামনাও করি। আমিন।

প্রসঙ্গত : স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় ইসলামাবাদে। সেখানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং সংসদ ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাথে পতাকা উত্তোলিত হয় এবং নেতৃত্ববৃন্দের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও এদিনের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান, প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেশাত্মবোধক গান গাওয়া ইত্যাদি। এই দিনে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সাধারণ নাগরিকবৃন্দ এই দিনে তাদের বাসায় পতাকা উত্তোলন করেন, এছাড়াও যানবাহন এবং পোষাকে জাতীয় পতাকার প্রদর্শন পরিলক্ষিত হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ব্যাপকহারে না হলেও কিছুটা নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হবে দেশটিতে।



source https://desh-duniyanews.com/%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf/

0 Comments