দৈনিক সমকাল ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বাঞ্চলের সাংবাদিক হাসান হিমালয় করোনা ভাইরাস নিয়ে অাতঙ্কের কিছু নাই বলে সুস্থ থাকতে যে পরামর্শ দিয়েছেন নিজের ফেসবুক স্টাটাসে।
তার ফেসবুক স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো। অাশা করি অাল্লহ চাহেন তো সবার কাজে লাগবে।
সাংবাদিক হাসান হিমালয় বলেন,
“আমি কোভিড-১৯ পজেটিভ
সোজা বাংলায় আমার করোনা হইছে।
আমার অফিসের সহকর্মী, মসজিদের মুসুল্লী ভাইসহ যারা প্রথম শুনেই ভয় পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি ভয়ের কিছু নেই। কারণ এমন একটা কিছু হতে পারে এমন-আশংকায় গত ৪ জুন থেকে আমি অফিস-মসজিদ এড়িয়ে চলেছি। শ্বশুরের জানাযা ও দাফন ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে খুবই কম।
অনেকেই আক্রান্তের খবর শুনে অবাক হয়েছেন। তবে আমার কাছে বিষয়টি ছিলো সময়ের অপেক্ষা মাত্র। গত ১৫ জুন আমার স্ট্যাটাসটি যারা পড়েছেন, তারা হয়তো বুঝতে পারছেন।
আমার শ্বশুরের শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়া, স্ত্রীর নিরবিচ্ছিন্ন সেবা এবং সার্বক্ষণিক স্ত্রীর পাশে থাকার কারণে আক্রান্ত যে হতে যাচ্ছি, মানসিকভাবে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আবার শরীরে কোনো উপসর্গ না থাকায় মনে হয়েছে, কিছুই হয়নি। আক্রান্ত নাও তো হতে পারি।
এমন দোলাচল সব সময়ই ছিলো, তবে আমার দ্বারা নতুন কারও মাঝে যাতে না ছড়ায় সেজন্য সার্বক্ষণিক সতর্ক ছিলাম।
পরের ঘটনাগুলো এতো দ্রুত ঘটেছে নিজেই ধাতস্থ হওয়ার সময় পাইনি।
১৪ জুন শ্বশুর মারা যাওয়ার পর, ১৫ জুন বিকালে তার রিপোর্ট ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি। শ্বশুরের রিপোর্ট আসার পর থেকে বাড়ি ভর্তি শোকাহত মানুষগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া, সার্বক্ষণিক তার সেবায় যারা ছিলেন ছিলেন আমার স্ত্রী, তার মা, ভাই ও ভাইদের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের টেস্ট করানোর যৌক্তিকতা বোঝানো, বুঝিয়ে সবার নমুনা জমা দেওয়া, একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া, নমুনা দিয়ে নিরাপদে সেখানে যাওয়া এবং ফিরে আসা, রিপোর্ট আসা পর্যন্ত নিজে ও সবাইকে সতর্ক রাখা…সব মিলিয়ে সময়টা খুবই কঠিন ছিলো।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথম থেকেই আমার শরীরে তেমন কোন উপসর্গ ছিলো না। অনেকেরই শরীরে নেই। যাদের ছোট-খাটো ছিলো দ্রুত কাটিয়ে উঠেছেন। গত রাত থেকে আমার স্ত্রীর আর জ্বর আসেনি। নিয়মিত ওষুধ চলছে।
আর প্রথম থেকেই আমার ভেতরে কেমন যেন একটা মানসিক দৃঢ়তা ছিল-সব সময়ই মনে হচ্ছিলো এতে আমার কিছুই হবে না। কারণটা পরে বুঝতে পেরেছি।
কিন্তু নানা রকম মানসিক চাপে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। আমি স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ি থাকলেও নিজের বাড়িতে ভাই রয়েছে, অসুস্থ ভাবী রয়েছে। তাদের সন্তান আমার কলিজার টুকরা আরাবি রয়েছে। যদিও তারা আমার সংস্পর্শে আসেনি। সামাজিকভাবে তারা কোন সমস্যা না পড়ে-এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এছাড়া নানা বাড়িতে আমার আম্মুও অসুস্থ ছিলো। তারও জ্বর-কাশি।
এসব ভাবনার সঙ্গে ফোন, বিভিন্ন মানুষের প্রেসক্রিপশান, চিকিৎসকদের ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ, একেক জনের একেক রকম টোটকা মস্তিক উপ্তত্ত ছিলো। এজন্য শ্বাস নেয়াসহ শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে কিছুটা সমস্যা হয়েছে-তবে এটা করোনার জন্য নয়, অস্থিরতার জন্য।
আর এই অস্থিরতার জন্য মাথা ঘাড় ব্যাথা ছিল। এজন্য কারও ফোন ধরতে পারিনি। ফোনে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই কান, মাথা ও ঘাড়ের প্রচন্ড রকমের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। যাদের ফোন ধরতে পারিনি…তাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমাকে সাহস দেওয়ার জন্যই অনেক কষ্ট করে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এই ভালবাসা আমি নিতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা…আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
পরামর্শগুলো দিয়ে দেই!
ওষুধ নিয়ে কিছু লিখছি না। সুস্থ হওয়ার পর লিখবো ?
০৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেই আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। রোগ দেওয়ার মালিক তিনি, সুস্থ করার মালিকও তিনি।
১। গত কয়েকদিন আপনার জ্বর-অসুস্থতা ছিল। করোনা পজেটিভ হইছে-এইবার আপনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। পজেটিভ এই শব্দটাই আপনার ওষুধ। মাথার ভেতরে এটা গেথে ফেলুন
২। পজেটিভ হইছেন-এবার আপনার মোবাইল ফোনটা পরিবারে কাউকে দিয়ে দেন। তারাই প্রয়োজনীয় ফোন রিসিভ করবে। ফেসবুক অফ করেন। এই দুটোই প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। পুরাতন ওসুখের সঙ্গে একটা যোগ করে।
৩। গরম পানির ভাপটা সত্যিই খুব কার্যকরী। বিভিন্ন মশলাসহ ভাপ নিন এবং খান। নিশ্বাসের ব্যায়ামটা খুবই জরুরী। যদি সম্ভব হয়-ফজরের নামাজের পর ছাদে গিয়ে হাটাহাটি করেন এবং নিশ্বাসের ব্যায়ামটা করুন।
৪। সবার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে যাবেন না। মাথা গুলিয়ে যাবে, শেষে কোনটিই করতে পারবেন না। যে কোন একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সেটা ফলো করেন। আপনার উপসর্গ অনুযায়ী আপনার চিকিৎসা…
৫। আইসোলেশনে থাকতে যেয়ে পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হবেন না। দূরে থেকে গল্প করুন, পুরাতন মজার স্মৃতিচারণ করুন। মানসিক শক্তি পাবেন। এলাকার কে কি বললো দয়া করে এই আলোচনা শুনতে যাবেন না। আপনার একজীবনের সঞ্চয় এলাকার লোকের কথায় নষ্ট হবে না।
সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে-আপনি এমনিতেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এই বিশ্বাস রাখুন। তবে আল্লাহ যদি আপনার মৃত্যু করোনায় লিখে থাকে আপনি ঠেকাতে পারবেন না।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%ad-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a7%9f-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%ae%e0%a6%a8/
0 Comments