একজন সিলভিয়া রোমানোর জন্য ইতালির দীর্ঘ যুদ্ধ ও তার ইসলাম গ্রহণ

ইন্জিনিয়ার কামরুল হাসান:

ছবিটিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের সামনে বসা যুবতীর নাম সিলভিয়া রোমানো।পেশায় একজন সেচ্ছাসেবী, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর আগে সে সেবা প্রদানের কাজে কেনিয়ায় গমন করেন এবং সেখান থেকে কিডন্যাপ হন। তার গুম হওয়ার খবরটি যখন কর্মরত সংস্থা ও পরিবারের পক্ষ থেকে ইতালির সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনির কাছে অবহিত করা হয়,ইতালির প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি টিম প্রায় দেড় বছর নিরলস পরিশ্রম করে শুধু মাত্র তাদের একজন ইতালীয় নাগরিককে উদ্ধার করতে। সর্বশেষ ইতালিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা ও তুর্কীর সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় কেনিয়া থেকে গুম হওয়া সিলভিয়া রোমানোকে সোমালিয়া থেকে উদ্ধার করে তাকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেন।

এখানেই শেষ নয় এই বৈশ্বিক ক্রান্তিলগ্নে সিলভিয়ার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই ইতালি থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে তাকে সোমালিয়া থেকে ইতালীতে আনা হয়। এটি ছিল,  ইতালির পররাষ্ট্র বিষয়ক গোয়েন্দাবাহীনির বিমান আইসের একটি ফ্লাইটে রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চাম্পিনোতে অবতরণ করেন।

সিলভিয়া যখন ইতালিতে পা রাখেন তখন ইতালির সময় দুপুর ২ টা। সিলভিয়ার স্বদেশে প্রত্যার্বতনকে স্বাগতে জানাতে বিমানবন্দরে সিলভিয়ার পরিবারের পাশাপাশি উপস্থিত হন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি মায়িয়োসহ রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

সিলভিয়া বলেন, আমি খুব খুশি, ধন্যবাদ। আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে বেশ ভাল আছি। আমি শক্ত আছি । প্রতিষ্ঠানগুলিকেও ধন্যবাদ। এখন আমি আমার পরিবারের সাথে থাকতে চাই।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা নিজ নিজ বক্তব্যে সিলভিয়াকে উদ্ধার কজে সংযুক্ত থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহীনিসহ সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই সুদীর্ঘ প্রক্রিয়াটাকে তারা তাদের দায়িত্বের অংশ হিসাবে অবিহিত করেন।

বিমানবন্দর চাম্পিনো থেকে, প্রকৃতপক্ষে, তাকে ইয়ালির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ সংস্থা ক্যারাবিনিয়েরি ডেল রোসের একটি ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রোমের প্রসিকিউটর সের্জিও কোলাইকাকো এবং ক্যারাবিনিয়েরির সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগ, যারা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে কেনিয়ায় এই অপহরণের তদন্ত করেছে। “শুনানি চলাকালীন সিলভিয়া ব্যাখ্যা করেন,” এখানে কোনও বিবাহ বা সম্পর্ক ছিল না, কেবল শ্রদ্ধা ছিল। “

২০ নভেম্বর ২০১৮ সাল থেকে কী ঘটেছিল তা আরও স্পষ্ট করার জন্য শুনানিটি অপরিহার্য। যখন কেনিয়ার মালিন্দী থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে চাকামা গ্রামে অপহরণকারীরা সেচ্ছাসেবী সংস্থা onlus Africa Mile এর সেচ্ছাসেবীকা সিলভিয়াকে অপহরণ করা হয়েছিল।

সিলভিয়া বলেন, “তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে আমাকে হত্যা করা হবে না এবং তাই হয়েছিল”। ২৫ বছর বয়সী এই যুবতী বলেন, “আমি একাধিক জেলারের সাথে কমপক্ষে চারটি গোপন আস্তানায় আসতে হয়েছে, যা গ্রামগুলির অভ্যন্তরে অ্যাপার্টমেন্টে ছিল”

তিনি আরো বলেন, আমাকে ঘন ঘন বিভিন্ন স্থানে সরানো হয়েছে এবং একই জেলারের উপস্থিতিতে বিভিন্ন আবাস্থলে।  তারা সশস্ত্র ছিল এবং তাদের মুখ ঢাকা ছিল। তবে আমার সাথে সর্বদা ভাল ব্যবহার করা হয়েছিল এবং আমি স্তরের ভিতরে যেতে নির্দ্বিধায় ছিলাম, যেভাবেই তদারকি করা হয়েছিল।

মিড়িয়া গুজব রটিয়েছিল, সিলভিয়াকে বিয়ে করতে ও ইসলাম গ্রহণ করতে জোর করা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য সূত্রে জানা যায় সিলভিয়া রোমানো খবর সমূহ অস্বীকার করেছেন।

তিনি জবানবন্দীতে বলেছেন, “বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি কুরআন পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরপরেই তিনি আল্লাহর বাণী ও ইসলামে আকৃষ্ট হন। তিনি বলেন, এটা সত্যি যে, আমি মুসলমান হয়েছি : এটি স্বইচ্ছে ও স্বতপ্রনোদিত হয়ে করেছি, অর্থাৎ অপহরণকারীরা কেউ আমাকে জোর করেনি, আমার সাথে মানবিক আচরণ করেছিল। এটা সত্যি নয়, যে আমাকে বিয়ের জন্য জোর করেছিল, অর্থাৎ শারিরীকভাবে জোর, কিংবা নির্যাতন।”

মহান সৃষ্টিকর্তা তার সহায় হউন এবং তার সকল কঠিন সময়ের স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে নতুন পথ চলতে সহায়ক হউন।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%8d/

0 Comments