আলেমদের সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও মুনাফিকদের গাত্রদাহ কেন?

দেশ দুনিয়া নিউজ
আলেমদের সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও মুনাফিকদের গাত্রদাহ কেন?

মসজিদে জুমা ও জামাত সীমিত করণের বিষয়ে আলেমদের সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও মুনাফিকদের গাত্রদাহ কেন?

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে তিনজন সনাক্ত হবার পর থেকে আলেমগণ জাতিকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। আল্লামা আহমদ শফী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই, নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম, মুফতি দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা আব্দুল মালেক, আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসুদ, ড. মোস্তাক আহমদ, মাওলানা গাজী আতাউর রহমানসহ দেশের প্রখ্যাত আলেমগণ বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার জন্য শুরু থেকে বলে আসছেন। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা তুলে ধরেছেন। এমনকি অসহায়দের পাশে দাড়ানোর জন্যও আহবান জানিয়ে আসছেন।

মসজিদে সমাগমের ব্যাপারে দুবার বৈঠক করলেন। বিজ্ঞ আলেমগণ শুরু থেকে মসজিদে জামাত বন্ধ করে দেননি। প্রথম ধাপে অসুস্থদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাদের এ বক্তব্যের সাথে একমত হয়ে বলেছেন, মসজিদ বন্ধ হবে না বরং অসুস্থরা মসজিদে যাবে না।

দ্বিতীয় দফা বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বৈঠক করে ৮ শ্রেণীর মানুষকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। জুমা ও জামাতকে সংক্ষেপ ও সীমিত আকারে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর যখন পরিস্থিতি আরো অবনতি হলো এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ খোলা রেখে জামাতে ৫ জন এবং জুমাতে ১০ জনে সীমিত করণের আদেশ জারি করলেন;  সাথে সাথে ওলামায়ে কেরাম তা মেনে নিলেন এবং বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে মানুষকে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানালেন। আল্লামা আহমদ শফী, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মুশতাক আহমদ, মুফতি দেলোয়ার হোসাইন, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সরকারি সিদ্ধান্তকে যথার্থ উল্লেখ করে বিবৃতি প্রদান করলেন। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এবং ডক্টর মুশতাক আহমদ এর বিবৃতি তুলে ধরা হলো-

১. গাজী আতাউর রহমান

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনার বিষয় জারি করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওয়াক্তিয়া নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং জুমার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জনকে নিয়ে জামায়াত সম্পন্ন করার জন্য। সাধারণ মুসল্লিগণ কে মসজিদের জামায়াতে শরিক না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার বিষয়ে আমাদের করণীয় কি, তা অনেকেই জানতে চাচ্ছেন। মসজিদে জামায়াতের বিষয়ে করণীয় নিয়ে গত ২৯ মার্চ ঢাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে দেশের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত সভায় হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই -এর প্রতিনিধি হিসাবে আমিও উপস্থিত ছিলাম।
আমাকে হযরত পীর সাহেব হুজুরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে দেশের শীর্ষ ওলামা হযরত যদি কোন বিষয়ে একমত হন তাহলে সে ক্ষেত্রে পীর সাহেব হুজুরের কোন দ্বিমত থাকবে না।

সেদিন ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২৯ মার্চের পরবর্তী সপ্তাহে দেশের পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তকেও দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম কোরআন হাদিসের আলোকে যথাযথ বলে মত দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে দেশের শীর্ষ ও নির্ভরযোগ্য দুই জন মুফতি; আল্লামা মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ এবং আল্লামা মুফতি দেলোয়ার হোসাইন ভিডিও বার্তায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিষয়ে তাদের সমর্থনের বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। অতএব এ ব্যাপারে আমাদের সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবাই ধর্মমন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় থাকবো। নিজ ঘরেই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করব। বেশি বেশি জিকির-আজকার, নফল রোজা, নফল নামাজ পড়বো এবং বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কান্নাকাটি করবো।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা বিশ্ববাসীকে এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে নাজাত দান করুন।

২. ড. মুসতাক আহমদ

হ্যাঁ; অবশ্যই কষ্টের বিষয়। তবে শরীঅত আমাদেরকে যখন যে নির্দেশ দেয় তখন সেটি আমল করা জরূরী। না মানলে গুনাহ হবে। বর্তমানে সাময়িক ভাবে গৃহে সবরের সঙ্গে থাকা, বাইরে বের না হওয়া, নিজঘরে প্রাইভেট জামাত করে নামায পড়া শরীঅতের হুকুম। আর ঐ যে কষ্ট হচ্ছে সেই কারণে আমরা ইনশাআল্লাহ জিহাদের সওয়াব পাবো । একান্তে রোনাজারীর পরিমান বাড়িয়ে দিন। আকাবির ও আসলাফ নির্দেশিত মুনজিয়াত ৭ আয়াতের অজীফা সকাল সন্ধায় আমল করুন। আতংকিত হবেন না। আল্লাহ আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। মন ছোট করবেন না। আমরা এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আর এ কারণে শরীঅতের এক সুন্নাত থেকে অন্য সুন্নাতের দিকে ছুটে এসেছি। আল্লাহর শোকর আমাদের সওয়াবে কমতি হবে না। এই ধরণের জটিল সময়ে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও সরকারের নির্দেশ মান্য করা একান্ত জরূরী। কার মওত কখন চলে আসে কে জানে? তা তো স্রেফ আল্লাহ জানেন। আমাদের আকাঙ্খা যেন সহীহ ঈমান আমল ও সুন্নাতের পাবন্দী নিয়ে কবরে যেতে পারি। দুআ চাই। খুব দুআ চাই।

আলেম সমাজের এমন সচেতনতামূলক বক্তব্য বিবৃতি এবং শরীয়তের আলোকে যথাযথ যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত দেয়ার পরও ধর্মে-কর্মে যাদের গাত্রদাহ, বিশেষ করে যারা করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার কামনা করেছিল এবং কিছু মুনাফিক শ্রেণীর মানুষ আলেমদেরকে হেয় করণের পথ খুঁজে বেড়ায়। তারা আলেমদের বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল কথা বলে যাচ্ছে, আলেমদেরকে অপরিণামদর্শী বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে  যা বড় দুঃখজনক।

লেখক: মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, রাষ্ট্রচিন্তক, রাজনীতি বিশ্লেষক
সম্পাদক, দেশ দুনিয়া নিউজ

আলেমদের সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও মুনাফিকদের গাত্রদাহ কেন?
দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক:



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%82%e0%a6%b2%e0%a6%95-%e0%a6%ac%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4/

0 Comments