পুঁজিবাদের বিদায়ঘন্টা বাজানোর এখনই সময়

দেশ দুনিয়া নিউজ
পুঁজিবাদের বিদায়ঘন্টা বাজানোর এখনই সময়

দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক: পুঁজিবাদ সবসময়ই প্রাণ আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সত্যকে আরো স্পষ্ট করে বললে, প্রাণ ও প্রকৃতিকে শোষন করেই পুঁজিবাদ গড়ে ওঠে এবং টিকে থাকে। প্রাণ ও প্রকৃতি পুঁজিবাদের কাছে ততক্ষণই মূল্যবান যতক্ষণ তা উৎপাদনে কাজে লাগছে। উৎপাদনের উপযোগিতা নিশ্চিত করতেই তারা প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে বা লালন পালন করে।

অনেকটা আপনার গরু বা মুরগি পালন করার মতো। আপনি গরুকে খাবার দেন বা ডাক্তার দেখান বা রাতে চোর থেকে রক্ষা করেন যাতে আগামী কোরবানীর ঈদে তাকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন। যখন বিক্রির সময় হয় তখন আপনি গরুর কোন সমস্যা বিবেচনায় নেন না বরং গরুকে কষ্ট দিয়ে হলেও ট্রাকে গাদাগাদি করে হাটে নিয়ে বিক্রি করে দেন।

ঠিক একইভাবে পুঁজিবাদও শ্রমিকদের খাদ্য, চিকিৎসা ও বসবাসের জন্য বেতনের নামে কিছু টাকা দেয়। শ্রমিককে অধিকতর শ্রমের উপযোগী রাখতেই তারা এই আয়োজনটুকু করে। আর যখনই সময় হয় তখনই ঠিক গরুর মতো করেই ট্রাকে ভরে নিয়ে এসে শ্রমিকদেরকে মুনাফা তৈরিতে ব্যবহার করে।
করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব যখন পর্যদুস্ত হয়ে আছে এবং বাংলাদেশও যখন উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে তখন এই পুঁজির স্বার্থে শ্রমিকদেরকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ট্রাকে গাদাগাদি করে ঢাকায় আসা আর কোরবানীর সময় ট্রাকে গাদাগাদি করে গরু আসার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।

লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আর দেশবাসীকে এই বিপদে ফেলে শ্রমিকদের কাজে ফিরতে হয়েছে কারণ পুঁজিবাদের স্বার্থে টান পড়েছে। অতএব প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হলেও কিছু করার নাই। যে পুঁজিবাদ এতোদিন আপনাকে লালন-পালন করেছে এখন সে তার মুনাফার জন্য আপনাকে বলি দেবে। আপনি যদি পুঁজিবাদকে উৎখাত না করেন তাহলে আপনাকে হাসিমুখে এই বলিদান মেনে নিতেই হবে।

সরকার!
মহামতি মার্ক্স সেই বহু আগেই বলেছেন, রাষ্ট্র/সরকার হলো পুঁজি রক্ষার হাতিয়ার। সরকার পুঁজি রক্ষায় দারোয়ানের ভূমিকা পালন করে। আর শ্রমিকদের খোঁয়াড়ের রাখাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
সেজন্যই দেখবেন, মাসের পর মাস কারখানা মালিক বেতন দিচ্ছে না। শ্রমিকরা দাবী দাওয়া পেশ করছে। সরকার চুপচাপ দেখে। যখনই শ্রমিকরা কারখানা ভাংচুর শুরু করে তখনই সরকারের পুলিশ বাহিনী সাইরেন বাজিয়ে হা-রে-রে করে ছুটে এসে শ্রমিকদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল মেরে ক্ষুধার্থ শ্রমিকদের হটিয়ে সেই বাহিনী হাসিমুখে বলবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। করোনা পরিস্থিতিতেও যখন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন হুমকির মুখে তখন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেএমইএ সভাপতিকে “অনুরোধ” করেছেন স্পষ্ট বক্তব্য দেয়ার জন্য। পুঁজিবাদের অধিনে আমরা সবাই পুঁজির দাস। সরকার হলো পুঁজির পাহারাদার আর আামাদের বিবেচনায় রাখাল। মনিব হলো পুঁজিবাদ।

পুঁজিবাদ এখন শুধু বস্তুগতভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই না বরং মানুষের চিন্তা-চেতনাকেও নিয়ন্ত্রণ করে। সেজন্যই করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলার বিষয়ে কোন বাদ-প্রতিবাদ হয় নাই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে অস্তিত্বে আসা বামপন্থীরাও এই ব্যাপারে নিশ্চুপ। এবং ইসলামপন্থীরাও সম্পুর্ন নিশ্চুপ। মানে হলো, পুঁজিবাদ প্রচারণা চালিয়ে এমন এক মনস্তত্ত্ব তৈরি করেছে যে, পুঁজিবাদের ঘোর বিরোধিরাও পুঁজির স্বার্থে প্রাণ-প্রকৃতি বলিদেয়ার বিষয়টা মেনে নিয়েছে।
পুঁজিবাদ বিশ্বজুড়েই তার প্রতি এই প্রশ্নাতীত আনুগত্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সেকারণেই করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ এই পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়ে কোন আন্দোলন হচ্ছে না। এমনকি কোন আলোচনাও হচ্ছে না। অথচ এই পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা মানুষের নিম্নতম সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। তারপরেও মানুষ সেই ব্যর্থ ব্যবস্থার অবসান চাওয়ার বদলে সেই নিপিড়ক ব্যর্থ ব্যবস্থার কাছে আশ্রয় খুজছে।

আশ্চর্যজনক সত্য হলো, পাশ্চাত্য পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কোন রকম প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত রয়েছে। তারা কেবল ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত।
কোন সন্দেহ নাই যে, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু মনে রাখা দরকার, রাজনৈতিক সংগঠনের কাজ শুধু ত্রাণ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হয় না। শুধু ত্রাণ দেয়া তো এনজিওদের কাজ। একটি রাজনৈতিক সংগঠন কোন সমস্যায় যেমন ত্রাণ নিযে যাবে তেমনি সেই সমস্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে তা দুর করার চেষ্টাও করবে। তা না করে কেবল ত্রাণে সীমাবদ্ধ থাকা রাজনৈতিক পরাজয় মেনে নেয়ার নামান্তর।

ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর উচিৎ এখন শক্তভাবে পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদের অনুচর তথাকথিত উদারতাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। দেশীয় শাসকগোষ্টির বিরুদ্ধেও কথা বলা উচিৎ। এবং রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ। পুঁজিবাদ, উদারতাবাদ ও দেশীয় শাসকগোষ্টির বিরুদ্ধে যদি তত্ত্বগত ও রাজনৈতিক গণআন্দোলন গড়ে তোলা যায় তাহলে এই অশুভ চক্রকে পরাজিত করা সম্ভব। আর যদি এই সুযোগ কাজে না লাগানো যায় এবং পুঁজিবাদের বিকল্প হিসেবে ইসলামকে সামনে না নিয়ে আশা যায় তাহলে ইসলামের রাজনৈতিক বিজয়ের একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হবে। আশা করবো ইসলামপন্থীরা এই সুযোগ কাজে লাগবে।

লেখক : শেখ ফজলুল করীম মারুফ
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইশা ছাত্র আন্দোলন

পুঁজিবাদের বিদায়ঘন্টা বাজানোর এখনই সময়
দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক:



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%81%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a6%98%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%be/

0 Comments