করোনা থেকে মুক্তির কুরআনী ওষুধ

দেশ দুনিয়া নিউজ
করোনা থেকে মুক্তির কুরআনী ওষুধ

কুরআনুল কারীমের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি মানবজাতির জন্য শিফা, রোগমুক্তির মাধ্যম।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মানবজাতির জন্য রহমত স্বরূপ। সূরা বনী ইসরাইল- ৮২

কুরআন মানুষের জন্য শিফার দুটি পদ্ধতি হতে পারে-

এক. প্রত্যক্ষ- কুরআনের আয়াত পড়ে কাউকে ফুঁ দেওয়া, পানিতে ফুঁ দিয়ে খাওয়া, কুরআনের আয়াত লিখে তাবিজ বানিয়ে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
দুই. পরোক্ষ- কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আমল গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময়ে রোগব্যাধি ও বালা-মসিবত থেকে উদ্ধার করেছেন বা করার ওয়াদা দিয়েছেন।

কুরআনুল কারীমের তেমন একটি আমল সূরা আনফালের ৩২ নং আয়াত। যেখানে আল্লাহ তাআলা ব্যাপকভাবে বালা-মসিবত নাযিল থেকে পরিত্রাণের উপায় বর্ণনা করেছেন।

সূরা আনফালের এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“ইস্তেগফাররত অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।”

বর্তমান সময়ের আলোকে এই আয়াতটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার মহৌষধ।

প্রথমে এই আয়াতের তাফসীর এবং শানে নুযুল সম্পর্কে একটু জানুন। এর পূর্বের আয়াতে কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-

وَإِذْ قَالُوا اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَاءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
তারা আল্লাহর কাছে হটকারীমূলক আবেদন করল, হে আল্লাহ! মোহাম্মদের আনীত দ্বীন বা কুরআন যদি সত্য এবং আপনার পক্ষ থেকে নাযিল হয়ে থাকে, তাহলে (আমাদের বিরোধিতার কারণে) আমাদের উপর আসমান থেকে পাথর বর্ষণ করুন অথবা কোন কঠিন শাস্তি নাযিল করুন।

আল্লাহ তাআলা তাদের জবাবে বললেন,
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
(ভাবার্থ) দুটি কারণে আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছি না।
১. নবী তোমাদের মাঝে বিদ্যমান। আর কোন নবী তার উম্মতের মাঝে থাকা অবস্থায় আমি তাদেরকে শাস্তি দেই না।
২. তোমরা ইস্তেগফার রত আছো। আর ইস্তেগফার রত কোন জাতিকেও আমি আজাব দিই না।

এখানে প্রথম আয়াতের বিষয়বস্তু তো স্পষ্ট যে, নবী আছেন বিধায় তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না। দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরীনে কিরাম বলেন, মক্কার কাফেররা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও তারা ইস্তেগফার করতো। তারা যখন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করত তখন মুখে غفرانك، غفرانك শব্দটি বলতো। এর অর্থ- আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মক্কার কাফেররা কাফের হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহকে বিশ্বাস করত। কিন্তু সাথে অন্য দেবদেবীকে আল্লাহর শরীক মনে করত। এই বিশ্বাসের কারণে তারা ইস্তেগফার করত। তারা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইস্তেগফার আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়েছে। যার কারণে আল্লাহপাক তাদের ওপর আজাব এবং শাস্তি দেননি।

এখন আসুন- আমরা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি এবং জেনেশুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করি না, আমরা যদি খাঁটিভাবে ইস্তেগফার করি, তাহলে কি আল্লাহ তাআলা আমাদের কথা শুনবেন না! আমাদের দোয়া কবুল করবেন না!! অবশ্যই করবেন। আমাদেরকেও কঠিন আযাব দ্বারা ধ্বংস করবেন না। সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য এটি আমাদের চূড়ান্ত পথ।
এই মুহূর্তে যদি আমরা খাঁটি মনে তাওবা-ইস্তেগফার করি তাহলে তিনটি উপকার এর যেকোনো একটি অবশ্যই হবে।

০১. ইস্তেগফারের কারণে আল্লাহপাক যদি আমার উপর রহম করেন, তাহলে আমি এই বিপদ থেকে মুক্ত থাকব।
০২. ইস্তেগফারের পর‌ও হয়তো কোন কারণে আল্লাহর হুকুমে আমার উপর বিপদ এসে গেল। আমি আক্রান্ত হয়ে গেলাম, কিন্তু মারা গেলাম না। তাহলে ইস্তেগফারের কারণে আমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর বিপদে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
০৩. আর যদি এ রোগে আক্রান্ত হবার পরে আমার হায়াত নাও থাকে, তাহলে আমি এমনভাবে আল্লাহর সাথে মোলাকাত করব যে, আমার কোন গুনাহ নেই। কারণ আমি তো খাঁটি মনে ইস্তেগফার করে দুনিয়া থেকে এসেছি।

তাই আসুন! আমরা প্রত্যেকে নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে খাঁটি মনে তওবা-ইস্তেগফার করি। সকল গুনাহ ছেড়ে দিই। ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি এবং কৃত গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হই।

[এই কথাগুলো যেহেতু গুজব নয় এবং স্বপ্নে পাওয়াও কিছু নয়- সরাসরি কোরআন থেকে বলা, তাই এগুলোর ওপর আমল করার লোকও অনেক কম পাওয়া যাবে। গুজব হলে হয়তো অনেকে আমল করত।]

লেখক: মুফতি আবদুর রহমান গিলমান
পরিচালক, জামিয়া কুরআনিয়া, ফুলগাজী, ফেনী
সদর, বামুক ফেনী জেলা

করোনা থেকে মুক্তির কুরআনী ওষুধ
deshdunianews



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%86%e0%a6%a8/

0 Comments