ধর্ষণ মহামারির কবলে বাংলাদেশ পরিত্রাণ কিসে?

  • এস.কে নাজমুল হাসান

প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় পাতায় ধর্ষণের খবর। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ধরেন প্রতিদিন ১০০ ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয় তবে এরপর অপ্রকাশিত থেকে থেকে আরও কয়েকশত।

এই অপ্রকাশিত খবরগুলো কেন প্রকাশ হয়না, এখানে এই প্রশ্নটা হতে পারে আর এর উত্তর খুবই সোজা তা হলো আত্মসম্মানের ভয়ে সমাজে একঘরা হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকাংশে এগুলো নিয়ে ঝামেলা করতে চায় না।

বাংলাদেশের মানুষগুলো সমাজের কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, সমাজের চোখে ছোট হওয়ার ভয়ে লোকলজ্জার ভয়ে এগুলো লুকিয়ে নিরবে বুক চাপড়ায়।

বুঝ হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের সংবাদ সেই সাথে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে আসছে কিন্তু আজ পর্যন্ত একটিও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে পাইনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দেখেছি ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করতে, মিষ্টি বিতরণও করেছে।

ক্যান্টনমেন্টের মত জায়গায়ও ধর্ষিত হয়েছে তনু সেই সাথে হত্যা। ধর্ষণ থেকে রেহায় পায়নি ৬ মাসের শিশু বাচ্চা ও ৮০ বছরের বৃদ্ধা, বাসে,ট্রেনে,লঞ্চে ধর্ষন শুধু তাই নয় বিমানের মধ্যেও ধর্ষণের চেষ্টা।

ধর্ষণের নোংরা এই মহামরি থেকে রেহায় পায়নি জন্মদাতা কন্যা ও জন্মদাত্রী জননী, অাপন ভাই থেকে বোন, শিক্ষক থেকে ছাত্রী, ছাত্র থেকে শিক্ষিকা, পুলিশ থেকে বিচারপ্রার্থী নারী।

বাংলাদেশ এমন সংবাদও দেখেছে করোনায় আক্রান্ত নারীও চিকিৎসা নিতে গিয়ে ধর্ষিত। ভোট না দেওয়ায় জনসম্মুখে ধর্ষণ। ত্রাণ নিতে ধর্ষণ। ছেলে-মেয়ের সামনে মাকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, মায়ের সামনে মেয়ে।

ধর্ষিত হওয়া মেয়েটাকে বিয়ে করতে চায় না কেউ, ধর্ষিত গৃহবধূকে নিয়ে স্বামী আর সংসার করতে চায় না, সমাজ তাদেরকে ঘরছাড়া করতে বাধ্য করে।

নারীবাদীরা সবসময় নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার অথচ ধর্ষণ বিষয়ে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে।

ধর্ষণ নিয়ে সমসাময়িক একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ চালিয়ে দেখেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সলিশ কেন্দ্র (আসক)।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট বলছে
চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬০১ জন নারী ও শিশু।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, পশ্চিমা ও ভারতীয় সংস্কৃতির বিরূপ প্রভাব, মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা।
সমাজবিদরা বলছেন, ধর্ষকদের বিচার না হওয়ার কারণে সমাজে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী সহিংসতার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে সর্বস্তরের মানুষ সেই সাথে পরিত্রাণও পেতে চায় এই মহামারী হতে।

এ মহামারী থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সরকার-প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সদিচ্ছা এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র। সেই সাথে ইসলাম নারীকে যেভাবে সম্মান দিয়েছে সেই সম্মান ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

“ভালো থাকো নারী ভালো থাকো বাংলাদেশ”।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%a3-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2/

0 Comments