কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-তুরস্ক সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ক্ষোভ

  • এস.কে নাজমুল হাসান

পাকিস্তান-তুরস্কের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক ভারত ভালোভাবে নিতে পারছেনা এমনটাই মনে হচ্ছে ভারতীয় চ্যানেল সমূহের নিউজগুলো দেখে।

বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন তুরস্ক সরকারের নতুন একটি শত্রু রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে অার তা সেই রাষ্ট্রটি হলো ভারত। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগান সরকার নতুন করে অারেকটি শত্রুর মুখে পড়তে পারেন।

ইসরাঈলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত ইতোমধ্যে উচ্চকণ্ঠে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও গ্রিসের নেতৃত্বাধীন তুর্কিবিরোধী
জোটে যোগ দিতে পারে সেই সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, তুরস্ক ও পাকিস্তান যোগসাজশের মাধ্যমে ভারতের আনুমানিক ১৮২ মিলিয়ন মুসলিমকে সরবরাহ করে উগ্রপন্থী বানাতে চাইছে।

ভারতে কতটা ক্ষোব রয়েছে তা গত ৭ অগাস্ট একটি মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে ভারতের জনপ্রিয় বহুলপ্রচারিত ইংরেজি পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস এ। ভারতের লেখক শিশির গুপ্ত তার লেখায় গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পাকিস্তানের পর ভারতবিরোধীতায় সবচেয়ে বড় ঘাটি হলো তুরস্ক। সে দাবি করছে, এরদোগানের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত তুর্কি ব্যক্তিবিশেষ ও গ্রুপগুলো তুরস্কে পড়াশোনার জন্য ভারতের মুসলমানদেরকে আকর্ষণীয় স্কলারশিপের ব্যবস্থা করছে। আর তারা আসা মাত্র সেখানে সক্রিয় পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের হাতে পড়ছে। গুপ্তের ভাষ্য খুব পরিচিত। তুরস্ক অাবার উসমানিয়া সাম্রাজ্য নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

মনে হচ্ছে উপমহাদেশ খুবই উর্বর ভূমি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের আমলে সহিংস নির্যাতনের কারণে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা ও পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়া অনান্য নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ পেয়েছেন এরদোগান।

এটিকে ঐতিহাসিক অনুরণনও বলা যায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয়দের পরাজয়কালে ভারতের মুসলমানরা খেলাফত আন্দোলন করেছিল উসমানীয়া সুলতানকে রক্ষা করার জন্য।

তখনকার সময়ে তিনি বিবেচিত হতেন মুসলিম বিশ্বের গ্রহনযোগ্য নেতা। তবে ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে ইসলাম বিরোধী মনোভাব তৈরি করে মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৪ সনে খেলাফত ধ্বংস করে দেয়। এরদোগান কামাল আতাতুর্কের ইসলাম বিরোধী সব সেক্যুলার ধারা বন্ধ করে ইসলামকে তার প্রধান ধারায় পরিণত করেছেন।

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত (অামেরিকা) হোসাইন হাক্কানি এ বিষয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমরা শেষ মুসলিম সাম্রাজ্য হিসেবে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের প্রশংসা করে। খেলাফত সমাপ্তির আশঙ্কায় ভারতের মুসলমানদের অসন্তুষের বিষয়টিও ফুটে ওঠেছিল খেলাফত আন্দোলনে।

তুরস্ক অাসলে ভারতের মুসলমানদেরকে কট্টর বানাতে চাইছে, এমন প্রচারণা আসলে মোদির হিন্দুত্ববাদী অবস্থান শক্ত করার কেবলমাত্র একটি কৌশল। এর মাধ্যমে মোদি তার মেরুকরণ কৌশলকে সুসংহত করতে চেষ্টা করছে। তবে ভারতের ক্ষুব্ধ হচ্ছে একারণে যে, কাশ্মীর ইস্যুতে এরদোগান পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন করছে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এরদোগান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে তার ভাষণে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল এর প্রস্তাবটির তিনি তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে মোদী রাগ হয়ে গ্রিক, আর্মেনিয়ান ও সাইপ্রিয়ট নেতাদের সাথে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে সাক্ষাত করেন এবং অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দুদিনের তুরস্ক সফরটি বাতিল করেন।

ভারত দাবি করছে যে কাশ্মীর তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখান অন্যকারোর হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে পাকিস্তান বলে আসছে, কাশ্মীর সংকট সমাধান হতে হবে জাতিসংঘ প্রস্তাবনার আলোকে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এরদোগানের দেয়া এক বক্তব্যে ভারতের ক্ষোভ বাড়ে। এরদোগান পার্লামেন্টে এ কথা বলেন যে কাশ্মীর ইস্যু পাকিস্তানের যত কাছে, আমাদেরও ঠিক ততটাই কাছে। সেখানকার নির্যাতনের বিষয়ে তুরস্ক সোচ্চার থাকবে। তিনি কাশ্মীরীরের মুসলমানদের সংগ্রামকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তুর্কি লড়াইয়ের সাথে তুলনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরদোগানের মন্তব্যকে গ্রহণযোগ্যনয় মনে করে।

কূটনৈতিক ব্যপারে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন করে তুরস্ক। এর বিপরীতে পাকিস্তান ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে তুরস্কের সামরিক অভিযানের প্রতি সমর্থন দেয়। এসব বিষয় আগে থেকে থাকলেও তা ভারতকে প্রভাবিত করেনি। বর্তমানে এরদোগান যেভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তাতেই মূলত ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের ক্ষোভ।

এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য জাহাজ নির্মাণের ২.৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছে, এছাড়া তুরস্কের ঐতিহাসিক শত্রু আর্মেনিয়ার কাছ থেকে রাডার কেনার জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে ভারত। তবে ভারত সম্ভবত তুরস্কের সাথে চুক্তিটি বাতিল করবে না। হয়ত এটি করছে যাতে পাকিস্তান-তুরস্ক সম্পর্ক শিথিল করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। তবে পাকিস্তান-তুরস্ক সম্পর্ক মূলত ঐতিহাসিক।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4-2/

0 Comments