নামাজ পড়লে জান্নাতে যাবে কুরআনে নেই- মূর্খ বক্তা আমির হামজা

মাওলানা আবদুর রাজ্জাক।

মুফতি আমির হামজা নামে একজন প্রসিদ্ধ বক্তা আছেন। দেশের প্রায় সব জেলাই তিনি তাফসির বয়ান করে থাকেন। বয়ানের ময়দানে তিনি বেশ কিছু বিতর্ক তৈরি করেছেন। তার বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি থেকে বিরত ছিলাম। কিন্ত সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই বক্তব্যটি সম্পর্কে দু চার কথা লেখা ঈমানী দায়িত্ব মনে করছি।

যে বক্তব্যে তিনি বললেন, “নামাজ পড়লে জান্নাতে যাবে কুরআনে পাকে এমন কোন আয়াত আমার চোখে ধরা পড়েনি”। এমনকি “মিফতাহুল জান্নাতিছ ছালাহ” অর্থাৎ নামাজ বেহেশতের চাবি-এই হাদিসটির ব্যাপারে তিনি বললেন ” আমি এর সনদ মতন কিছুই পায়নি।

পাঠক! তার উপর্যুক্ত বক্তব্যটি সঠিক না বেঠিক তা পরে আলোচনা করবো। প্রথমে একটু চিন্তা করুন তো । বাংলা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি অংশ তার ভক্ত। তারা তাদের এই প্রিয় বক্তার বয়ানটি শোনার পর কি আর জান্নাতের প্রত্যাশা নিয়ে আগের মত নামাজ পড়বে? তাফসির বয়ানের উদ্দেশ্য কি মানুষকে নামাজ থেকে বিমুখ করা?

তার শ্রোতাদের অন্তরে কি এ কথা আসবেনা যে, নামাজ পড়লে জান্নাতে যাবে কুরআনে এমন আয়াত যদি না থাকে, রাসুলের এমন কোন হাদিস যদি না থাকে তাহলে নামাজ পড়ে লাভ কি?
আচ্ছা কেউ কি স্বজ্ঞানে, দিনের দরদী হয়ে এমন বয়ান করতে পারে?

এখন প্রশ্ন হলো ; একজন আলেম হয়ে তিনি এমন বয়ান কেন করলেন?
তার বিতর্কিত বয়ানগুলোর প্রতি মনোযোগ দিলে শুনবেন, তিনি বলেন, আগে আমরা এমন শুনতাম।
আসলে বিষয়টি এমন নয় বা ভুল।

যেমন তিনি এক বয়ানে বললেন- আগে আমরা জানতাম অজু ছাড়া কুরআন ধরা যাবেনা, এটা ভুল। যে হুজুর বয়ান করে সে দলীল দেখাতে পারবেনা।

এভাবে বয়ান করার উদ্দেশ্য আমার মতে, নিজেকে সবার থেকে বড় আলেম, নিজে আধুনিক আলেম। এমন কিছু প্রকাশ করা। কারণ মানুষ এখন আধুনিকতাকে বেশি পছন্দ করে। আমি তাকে দীনের দুশমন বলবো না। তবে আলেমের মধ্যে জাহেল বলবো।

এটা কেমন কথা? আমি মনে করি, যে আলেম নিজেকে বড় আলেম বুঝানোর জন্য, আধুনিক আলেম বুঝানোর জন্য, দীনের ক্ষতি করে। সে আলেমদের মধ্যে জাহেল। তবে আমি তাকে জাহেল বলে ছেড়ে দিলাম এটা আমার উদারতা। না হয় তাকে দীনের দুশমন বলা উচিৎ।

এবার তার কথাটা নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি।
সে বললো নামাজ পড়লে জান্নাতে যাবে, কুরআনে এমন কোন আয়াত তার চোখে ধরা পড়েনি।
তাকে একটু জিজ্ঞেস করা দরকার। মহান আল্লাহ কুরআনে পাকে যে, ৮২ জায়গায় নামাজের গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা জাহান্নামে দেয়ার জন্য?
নামাজ পড়লে যদি জান্নাত না দেন, তাহলে মহান আল্লাহ নামাজের এত গুরুত্ব দিলেন কেন?
হাদিসে পাকে – নামাজকে ঈমানের মৌলিক স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত করলেন কেন?

কালামে পাকের সূরা মু’মিনুন এর শুরুতে- সফলকাম মুমিনদের কিছু বিশেষ গুণ উল্লেখ করেছেন এবং যেসব মুমিনের মাঝে এ গুণগুলো থাকবে তাদেরকে মহান আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করেছেন।
সে গুণগুলোর মাঝে অন্যতম হলো নামাজ।
যেমন আল্লাহ বলেন “ক্বাদ আফলাহাল মু’মিমূন।
আল্লাজীনা হুম ফী সালাতিহিম খাশিউন।”
আচ্ছা ঈমান আনলে, নেক আমল করলে জান্নাত দেবেন, এমন আয়াতও কি এই বক্তার চোখে ধরা পড়েনি?

যদি নেক আমলে জান্নাত মিলবে, এমন আয়াত পাওয়া যায়। আর প্রধানতম নেক আমল হলো নামাজ। তাহলে কি এ কথা বলা যায় না যে, প্রক্ষান্তরে নামাজ দ্বারা জান্নাত পাওয়া যাবে।

আর তিনি যে প্রসিদ্ধ হাদিসের ব্যাপারে বললেন-
হাদিসটির তিনি সনদও পাননি মতনও পাননি।
এই হাদিসটি তো সিহাহ সিত্তাহ’র কিতাব ” জামে’ তিরমিজিতে আছে। তিনি এত প্রসিদ্ধ হাদিস! এত প্রসিদ্ধ কিতাবে পেলেন না! তার এই জেহালতটা
জনসম্মুখে প্রকাশ করার কি প্রয়োজন ছিলো?

লেখক ; সম্পাদক দেশ দুনিয়া নিউজ



source https://desh-duniyanews.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c-%e0%a6%aa%e0%a7%9c%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87/

0 Comments