মুফতি রবিউল ইসলাম।
কুরবানী ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও মৌলিক ইবাদত। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতিকী বিধানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর শর্তহীন আনুগত্য ও ত্যাগের শিক্ষা। আদম আ. থেকে নিয়ে সর্বযুগে কুরবানীর বিধান ছিল। (অবশ্য আদায়ের পন্থা এক ছিল না।) আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِ.
“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।”
-সূরা আল-হাজ্জ্ব : ৩৪
কুরবানী গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত কুরবানী করেছেন। কোনো বছর বাদ দেননি। যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে,
أقامَ رسولُ اللهِ ﷺ بالمدينةِ عشرَ سنينَ يُضحِّي
রাসুলল মদিনার ১০ বছর জিন্দেগীতে কখনো কোরবানী বাদ দেননি।-তিরমিযি : ১৫০৭ (সহিহ)
এমনকি রাসুল সা. হযরত আলী রা.কে আদেশ করেছেন, যেন (ইন্তেকালের পরেও) তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়।
ফলে হযরত আলী রা. প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসুল সা. এর পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। -আবু দাউদ : ২৭৮৭, মুসনাদে আহমদ : ৮৪৩
কুরবানীর ফযিলত
عن عائشة أم المؤمنين:] ما عَمِلَ آدَمِيٌّ من عملٍ يومَ النَّحْرِ أَحَبَّ إلى اللهِ من إهراقِ الدَّمِ إنه لَيَأْتِي يومَ القيامةِ بقُرونِها وأشعارِها وأظلافِها وإنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ من اللهِ بمكانٍ قبلَ أن يقعَ من الأرضِ فطِيبُوا بها نَفْسًا
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা.ইরশাদ করেন :
“কুরবানীর দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কুরবানী করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়।
কিয়ামতের দিন এই কুরবানীকে তার শিং,
পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে।আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানী কর।” -জামে তিরমিযী : ১৪৯৩ (হাসান)
রাসুল সা. এর প্রতি বছর কুরবানি করার আমল এবং মৃত্যুর পর সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওসিয়ত থেকেও কুরবানির ফজিলত ও গুরুত্ব বুঝে আসে।
কুরবানী না করার ভয়াবহতা
عن أبي هريرة:] من وجدَ سعةً لأن يُضحّي فلم يُضحّ فلا يحضرْ مصلانا
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসুল সা. বলেন : “যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।”-ইবনে মাজাহ : ৩১২৩ (হাসান)
বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে কুরবানী করা চাই
ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুটি জিনিসের উপস্থিতি একান্ত জরুরী।
১. বিশুদ্ধ নিয়ত
২.সঠিক কর্মপন্থা।
নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে এবং সুন্নাহ সমর্থিত
পন্থায় কোন ইবাদাত না হলে তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। কুরবানীর ক্ষেত্রেও কথাটা সমানভাবে প্রযোজ্য।
আমাদের অনেকেই লোকলজ্জা কিংবা নিজের যশ-খ্যাতি ও প্রচারের উদ্দেশ্যে কুরবানী দিয়ে থাকে।
ফলে এই কুরবানীরর মাধ্যমে তার কোনো সাওয়াব অর্জিত হয় না; বরং গুনাহ হয়।
রাসুল সা. এক হাদিসে এরশাদ করেন :
٣٣- [عن محمود بن لبيد الأنصاري:] إنَّ أخوفَ ما أخافُ عليْكم الشِّرْكَ الأصغرَ قالوا: وما الشِّرْكُ الأصغرُ؟ قالَ: الرِّياءُ
“তোমাদের ব্যাপারে আমি সর্বাপেক্ষা ভয়ের বস্তু যা আমি ভয় পাচ্ছি তা হচ্ছে ছোট শিরক-রিয়া। (লোক দেখানো ধর্ম-কর্ম)” -মুসনাদে আহমাদ : ২৩১১৯ (সহিহ)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কেুরবানী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।” -সূরা আল-আনআম : ১৬২
আল্লাহ তাআলা অনত্র বলেন :
فصل لربك وانحر
“অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন।”- সূরা কাউসার : ২
অন্যত্র বলেন :
لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقْوَىٰ مِنكُمْ.
“এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।”-সূরা হাজ্জ : ৩৭
source https://desh-duniyanews.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%86%e0%a6%a8-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b9-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b2/
0 Comments