ওমর ফারুক আবদাল:
তবে মানবতার এই দুর্দিনে, সাম্যের এই দুর্বিক্ষনেও দুরে সরে যায় নাই মানবতাবাদী সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। লক ডাউনে দিন মজুর হত-দরিদ্র মানুষদের পাশে দাড়াতে ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খবর নিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ি সাহায্য সহযোগীতা করতে নেতা কর্মীদের আদেশ করেন সংগঠনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সংগঠনের সকল শাখাকে তিন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন।
১। লকডাউনের কারনে অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে সাধ্যমতো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ
২।বর্তমান পরিস্থিতির শিকার স্বল্প আয়ের আলেমদের ও বিধবা আলেম পরিবারদের গোপনে কিছু হাদিয়া প্রদান করা।
৩।করোনায় মৃতদের দাফন-কাফনের ব্যাবস্থা করা।
দলের আমীর কর্মসূচি ঘোষনা করে নিজেই তা বাস্তবায়নে মাঠে নামেন। নিজ কাধে করে চালের বস্তা মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক প্রত্যেক জেলা, উপজেলা এমনকি পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও টিম ও ফান্ড গঠন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ফেনী জেলায়ও চলতে থাকে কাজ। ইউনিয়ন,ওয়ার্ড পর্যায়েও টিম গঠন করে ঘরে ঘরে ত্রান সামগ্রী পাঠানো হয়। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, মাদরাসার শিক্ষকের পাশে থেকে নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। ত্রান দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বৈষম্যের চিন্তা করেনি তারা। বরং মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও প্রয়োজন অনুপাতে ত্রাণ সামগ্রী পৌছানো হয়ে।
করোনা মহামারির প্রকোপ থেকে নিরাপত্তার নিমিত্তে জনসচেতনতায় লিফলেট, মাক্স ও সেনেটারাইজ বিতরণ করা হয়।
রমজানে ইফতার সামগ্রী, ঈদে ঈদবস্ত্র বিতরন করে দরিদ্র পিড়িত পরিবারের মাঝে।
এছাড়াও অসহায় কৃষকরা যখন ক্ষেতে ফসল নিয়ে ভোগান্তিতে ছিলেন। শ্রমিকের অভাবে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারছিল না। তখন দেশজুড়ে ধান কাটার কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি। ধান কাটা, মাড়াই সহ কৃষকদের সাথে থেকে আন্তরিকতার সাথে কর্মসূচি পালন করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে সংগঠনটি।
সর্বশেষ যখন করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন-কাফনে কেউ এগিয়ে আসছেনা। রাস্তায় লাশ ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছে স্বজনরা। গোসল ছাড়াই লাশ কবরস্থ করে ফেলছে কেউ কেউ। প্রগতিবাদীরা লাশ পুড়ে ফেলার দাবি জানাচ্ছে।
তখন দলের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই দলীয়ভাবে লাশ দাফন-কাফনে সেচ্ছাসেবকটিম গঠনের নির্দেশ দেন।
নির্দেশ পেয়ে পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সেচ্চাসেবক টিম গঠন করা হয়। বাদ পড়েনি ফেনী জেলাও। প্রতিটি উপজেলায় গঠন করা হয় সেচ্ছাসেবক টিম। নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে, রাষ্ট্রীয় কানুন মেনে লাশ কাফন-দাফন করছেন তারা।
ফেনী জেলার বর্তমান চিত্র
প্রথম আলোর সুত্রে জানা যায়, জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণকক্ষের সমন্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, গত দুই মাসে জেলায় ২ হাজার ১৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। গত শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৮৬২ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ফেনী সদরের ৯২ জন, ছাগলনাইয়ায় ২৭ জন, দাগভূঞায় ৭৭ জন, সোনাগাজীতে ২৯ জন, ফুলগাজীতে ১০ জন ও পরশুরামে ৮ জন। অপর ৫ জন পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম, মিরসরাই, চৌদ্দগ্রাম ও সেনবাগের বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩ জন। এদের মধ্যে সদরে ২১ জন, সোনাগাজীতে ৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩ জন, দাগনভূঞায় ১০ জন, পরশুরামে ৭ জন ও ফুলগাজীতে ৪ জন। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ জন। উপসর্গসহ মোট ১২ জন।
মৃত ব্যক্তিদের লাশ কাফন -দাফন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা নুরুল করীম এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মাওলানা একরামুল হক ভূইয়া মুঠোফোনে দেশ দুনিয়া নিউজকে বলেন,
একজন মানুষ মারা গেলে তার উত্তমভাবে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা জীবিতদের দায়িত্ব। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা দেখলাম যে, মানুষ মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন থেকে নিজেদের দূরে রাখছে। মৃত ব্যক্তিদের লাশ অবমাননার শিকার হচ্ছে। তখন আমরা দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মানবিক দাবিতে সেচ্ছাসেবী টিম গঠন করি ৷ এ পর্যন্ত আমরা ফেনী জেলার সব উপজেলায় দাফন-কাফন টিম গঠন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ১৫টি লাশ দাফন করেছি ৷ তম্মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৪ টি, সোনাগাজী উপজেলায় ৬টি এবং দাগনভূঞা উপজেলায় ৫টি ৷
বিস্তারিত জানার জন্য ইসলামি অন্দলান বাংলাদেশ সোনাগাজী উপজেলা শাখার সভাপতি মুফতি আহসান উল্লাহ সাহেব ও দাগনভূঞা উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আলাউদ্দিন সাবেরীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, জেলা শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর টিমলিস্ট জমা করি ৷ ইউএনএ মহোদয় আমাদের আবেদন গ্রহণ করেন এবং আমাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ৷ তারপর থেকে আমরা যখনই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর পক্ষ থেকে সংবাদ পাই সাথে সাথে আমরা টিম নিয়ে হাজির হই।
সোনাগাজী উপজেলা সভাপতি আরও বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো লাশ দাফন করেছি আমরা সরকার থেকে বিনিময় হিসেবে একটি টাকাও গ্রহণ করিনি; বরং স্বেচ্ছায় নিজেদের অর্থায়নে এ কাজ আঞ্জাম দিয়ে আসছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর পক্ষ থেকে শুধুমাত্র পিপিই সরবরাহ করা হয় ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা এখনো প্রস্তুত। ফেনী জেলার যেখানেই লাশ দাফন নিয়ে কোন সমস্যা হবে আমাদের জানালে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে পোঁছে যাব, ইনশাআল্লাহ।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b7-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%a8-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%82/
0 Comments