মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রসংশিত হলেন খুলনার ডিসি

এস.কে নাজমুল হাসান: (খুলনা জেলা প্রতিনিধি)

খুলনা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটি ছেলে
মোবাইলে কথা বলছে আর বার বার চোখ মুছছে । ছেলেটির ঠোট, মুখ যেন একসাথে কেঁপে উঠছে। ফোনের অপর প্রান্তেও যিনি কথা বলছেন তিনিও হয়ত কাঁদছেন ফোনের ওপারের লোকটির কান্না থামানোর আকুতিই ফুটে উঠছে এপ্রান্তে কথা বলতে থাকা ছেলেটির। অাসলে এটি কোন দু:সংবাদ বা কষ্টের খবরের জন্য নয়-এটি আনন্দাশ্রু। ছেলে চাকরি পাওয়ায় গ্রামের হতদরিদ্র খেটে খাওয়া একজন পিতার আনন্দ, আবেগ, আর কৃতজ্ঞতার সংমিশ্রণে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

ছেলের চাকুরী পাওয়ার খবরে কাদছেন বাবা। সে তার মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে তাই তার চোখে আনন্দাশ্রু। একই সাথে হতদরিদ্র পরিবারটি যেন অকুলে ঠাই পেয়েছে। আট ভাইবোনের মধ্যে পরিবারে প্রথম সরকারী চাকুরী পাওয়া খুলনার রূপসা উপজেলার মোছাব্বরপুর গ্রামের চাকুরী প্রার্থী মো: গোলাম হাবিব।

সে খুলনা জেলার ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কোন প্রকার অর্থব্যয় ও তদ্বির ছাড়াই মেধার ভিত্তিতে চাকুরী পেয়েছেন তাদের মধ্যে একজন। সে জানায় টাকা ও তদ্বির ছাড়া যে সরকারী চাকুরী হয় তা বিশ্বাস ছিল না। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও এরআগে তার এবং বড় ভাইয়ের চাকুরী হয়নি ঘুষ দিতে না পারায়। কিন্তু খুলনা জেলা প্রশাসক স্যার করেছেন সম্পূর্ন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কোন প্রকার তদ্বির ও টাকার লেনদেন ছাড়াই আমাদেরকে চাকুরীতে নিয়োগ দিয়েছেন।

তাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা নেই। আনন্দ, আবেগ, আর কৃতজ্ঞতা সংমিশ্রণে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে সে বলতে লাগলো “ডিসি স্যারের জন্য মন খুলে দোয়া করি, নামাজ পড়ে দোয়া করব। স্যারের জন্য আমি দোয়া করি স্যারকে যেন আল্লাহ অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখেন। এমন ভালো একজন স্যারের জন্য দোয়া না করলে আমি যে অকৃতজ্ঞ হয়ে যাব। আল্লাহ যেন স্যারের সহায় হোন”।

এ কথাগুলো বলছিল আর চোখ দিয়ে তার আনন্দের অশ্রু ঝরছিল। তার মতে, দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ কতৃর্পক্ষ যদি খুলনার জেলা প্রশাসকের মত হয় তবে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং অবাধ দূর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) হেলাল হোসেন, খুলনায় কোন অর্থব্যয় ও তদ্বির ছাড়াই চাকুরী দিয়ে প্রসংশিত হয়েছেন রের্কডও গড়েছেন বলে মনে করেন হাবিব।

অপর চাকুরী প্রার্থী একই উপজেলার পালেরহাট ডোমরা গ্রামের মাসুম সরদার জানায়, ১৯৯৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের উৎসাহেই অনেক কষ্টে সে লেখাপড়া করলেও ২০১৬ সাল থেকে সরকারের খাদ্য বিভাগ, কাষ্টমস, রেল মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরীর পরীক্ষা দিয়েও তদ্বির ও অর্থব্যয় করতে না পারায় চাকুরী হয়নি।

গরীব পরিবারের কারনে কোথাও অর্থব্যয় করতে পারিনি। মাত্র ৪০০টাকার চালানের খরচের মাধ্যমেই জেলা প্রশাসক মহোদয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করে নিয়োগ দিয়েছেন। আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে যোগদান করতে বলেছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি ভালো মানুষ সেজন্য আমাদের মেধার ভিত্তিতে চাকুরী হয়েছে।

এভাবেই যদি সারাদেশের জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তর তদ্বির ও অর্থব্যয় ছাড়াই চাকুরীতে নিয়োগ দিতে পারে তবেই দেশ থেকে দূর্নীতি ও অনিয়ম দুর করা সম্ভব বলে মনে করেন মাসুম সরদার। শুধুই গোলাম হাবিব বা মাসুম সরদারই নয় খুলনা জেলার ৫০টি ইউনিয়নে নিয়োগ পাওয়া চাকুরী প্রার্থীরা একই কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এবং মন্ত্রনালয় থেকে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রও দেয়া হয়। যারমধ্যে খুলনা জেলা ৫৪টি ইউনিয়নেও নিয়োগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়নগুলোতে আউট সোর্সিংয়ে কাজ করা কর্মীরা আন্দোলন এবং নিয়োগ স্থগিতের জন্য ইউডিসি’র একটি গ্রুপ আদালতে মামলাও দায়ের করেন। আদালতে মামলার কারনে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হলে পরে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী ছাড়পত্রের মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়। এরপর আদালত কয়েকটি ইউনিয়নে নিয়োগ স্থগিত করে আদেশ দিলে খুলনার ৪টি ইউনিয়নে নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে, নিয়োগের ছাড়পত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় খুলনার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলার ৫০টি ইউনিয়নে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই হিসেবে গত ২০ জুন সরকারের ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা মেনে খুলনা জিলা স্কুল, কালেক্টরেট পাবরিক স্কুল এন্ড কলেজ ও সরকারী মডেল স্কুলে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

একই দিন বিকেলে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করে দুইদিন ধরে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। ২২ জুন জেলার ৫০টি ইউনিয়নের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ন ৫০জনকে নিয়োগ প্রদান ও ২৫জনকে অপেক্ষামান তালিকায় রাখা হয়। জেলার ৫৪টি ইউনিয়নে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মোট ১ হাজার ২৯৩ জন আবেদন করেন। তারমধ্যে যোগ্য প্রার্থী ছিল একহাজার ৬১ জন। লিখিত পরীক্ষায় ১৪০ জন উত্তীর্ন হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫০ জনকে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আর ৪টি ইউনিয়নের বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় সেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্টান এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করা হলে সেটাতে জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানায় অনেকে। কারন এখানে যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা সবাই খুলনার বিভিন্ন উপজেলার ছেলেমেয়ে। এ নিয়োগ অবশ্যই খুলনার জন্য খুবই ভালো হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসন সব সময়ই সততা, স্বচ্ছাতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী হয়ে কাজ করছে। এ নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বজায় রেখে করা হয়েছে। এরফলে গরীব ও মেধাবীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রমান করে নিয়োগ পেয়েছে। আগামীতেও এভাবেই মেধার ভিত্তিতে সকল নিয়োগ প্রদান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a7%e0%a6%be-%e0%a6%93-%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87/

0 Comments