‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’
আচ্ছা, এখন যদি অমুসলিম কেউ এই পোষ্টে লেখা কালেমাটি পড়ে ফেলেন তাহলে কি তিনি মুসলিম হয়ে যাবেন?
এর জবাবে নিশ্চিতভাবে আপনারা বলবেন, আরে নারে ভাই। এভাবে শুধু মুখে মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লেই মুসলিম হওয়া যায় না। কালেমার এই ঘোষণার সাথে অত্যাবশ্যকীয় শর্তটি হচ্ছে, অন্তরে পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে এই কালেমার স্বাক্ষ্য দিয়েই ঈমান আনতে হবে।
আচ্ছা! এটা শুধুমাত্র পড়লেই যদি কেউ মুসলিম না হয়, তাহলে আমি বা কি করে এটা শুধুমাত্র মুখে মুখে পড়েই মুসলিম হয়ে গেলাম?
জবাবে নিশ্চয়ই আপনারা বলবেন, একথা শুধু মুখে বললেই হবেনা। মৌখিক ঘোষনার সাথে সাথে অন্তরে দৃঢ়ভাবে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে-— ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই’। এখানে ‘ইলাহ’ মানে হচ্ছে- উপাস্য, হুকুমকর্তা, ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা। অর্থ্যাৎ সমস্ত কিছুর কার্যনির্বাহক, আইন ও বিধানদাতা এবং সমগ্র জাহানের স্রষ্টা, পরিচালক ও প্রতিপালক হচ্ছেন এক আল্লাহ। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। সমস্ত ক্ষমতার উৎস ও মালিক আল্লাহ। তিনি সকলের উপর ক্ষমতাধর। তিনিই ক্ষমতা দেন এবং ক্ষমতা কেড়ে নেন। তাঁর ক্ষমতায় কারো কোনো অংশ নেই।
…. এখন বুঝেছেন।এগুলো শুধু মুখে মুখে বললেই হবে না। এগুলোকে অন্তরে বিনাযুক্তিতে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে হবে। এবং আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এভাবে আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সাঃ) এর প্রদর্শিত জীবনব্যাবস্থাকে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিয়ে সেমতাবস্থায় জীবন পরিচালিত করার নামই হচ্ছে ঈমান।
জ্বী, একদম সঠিকভাবে বলেছেন। সবই তো বুঝলাম। কিন্তু….
আমিতো আমার অফিসের বস, দলের নেতা, পীর-ফকির, ধনবান-বিত্তশালী, ক্ষমতাবানদের গুণকীর্তন করে তাদের কাছ থেকে অনেক বেশী কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা রাখি।
আমিতো নামাজসহ আল্লাহর ফরজ হুকুমগুলোর চেয়ে দুনিয়ার কাজকর্মকেই বেশী গুরুত্ব দেই।
আমিতো বিশ্বের তাবৎ বিখ্যাত বই-পুস্তক পড়ে শেষ করলেও একটিবারের জন্যেও আল্লাহর কিতাবটিকে ছুঁয়ে দেখিনি। একবারের জন্যও জানতে চাইনি, আল্লাহর এই কিতাবটির মধ্যে আমার সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য কি নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমিতো জিহাদ ও পর্দার মত কোরআনের সুস্পষ্ট বিধানকে যতটুকু পারি মুখবন্ধ করে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। যাতে আমি উগ্রবাদীর তকমা না পেয়ে যাই।
আমিতো রাসুল (সাঃ) এর জীবনাদর্শকে আমার জীবনে ছিটেফোঁটাও স্থান দেয়নি।
আমিতো মুখে আল্লাহর ভয়ের কথা বললেও দুনিয়ার ক্ষমতাবানদেরই বড্ড ভয় করি। আল্লাহর সৃষ্টিকেই বরং ক্ষমতার উৎস ও মালিক বলে স্বীকার করি। ‘আল্লাহই ক্ষমতা দেন এবং ক্ষমতা কেড়ে নেন’- একথা জানার পরও আমেরিকা, চীন, ভারত কিংবা অন্য কোন শক্তিকে ক্ষমতাদানকারী বলে বিশ্বাস করি।
আল্লাহর দেয়া আইন ও বিধানকে পাস কাটিয়ে নিজেদের দেয়া বিধান ও আইন মোতাবেক চলি। এই পয়েন্টে কথা বলার পর নিজেকে উগ্র ধর্মান্ধ বা জঙ্গি ট্যাগ খাওয়ার ভয়ও করি। আতংকিত থাকি, এ ধরনের পোষ্ট লাইক-শেয়ার করে আবার না কোন বিপদের মধ্যেই পড়ি…..
এখন আপনারাই বলুন, এভাবে আমি শুধুমাত্র মুখে মুখে কালেমা পড়ে কতটুকু প্রকৃত মুসলিম হতে পেরেছি? আর কতটুকুই বা কালেমায় প্রকৃত বিশ্বাসী হতে পেরেছি?
লেখক: ডক্টর তুহিন মালিক
আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a7%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a7%9c/
0 Comments