পুঁজিবাদের মোকাবেলায় ইসলামি অর্থনীতিই শ্রেষ্ঠ

 

দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্কঃ  করোনা সংকটে পৃথিবী ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতি পৃথীবির জন্য কতোটা হুমকি।

সমাজতন্ত্র নিয়ে বলার কিছু নেই।সমাজতন্ত্র ইতিমধ্যে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যেমনি আকস্মিক তার আবির্ভাব, তেমনি সহসা তার তিরোভাব।
যেসব দেশ এখনো সমাজতন্ত্রের দাবিদার তারা বহুবার পরিবর্তন, সংযোজন, সংশোধন করেও পৃথিবীর সামনে সমাজতন্ত্রের কোন ইতিবাচক নজরানা পেশ করতে পারেনি।
তাই সমাজতন্ত্র বিশ্ব অর্থনীতিতে কখনো চালিকাশক্তি হবে তা ভাবা দুষ্কর।

তবে বর্তমানে পুঁজিপতিরা পুঁজিবাদী অর্থনীতির ওপর ভর করে যে ভাবে ঝোঁকে পরিণত হয়ে গরীবের রক্ত চুষে সম্পদের পাড়া গড়ছে। তাতে বর্তমান বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতির অভিশাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং ইসলামি অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা অধিকতর জরুরি।

নিসন্দেহে বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক পুঁজিবাদগোষ্ঠী। বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলে পুঁজিবাদীরা যে পরিকল্পনা বা কর্মসূচি মানব বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে, তাতে মানুষ সাময়িক উপকার দেখলেও এর গভীরে লুকিয়ে আছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ। যা চর্ম-চোখে দেখা যায়না। অনুভব করতে হয় গভীর চিন্তা দিয়ে।

বিত্তশালীদের সঙ্গে বিত্তহীনদের আকাশ-পাতাল ব্যবধানই পুঁজিবাদী অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য সফলতা । পুঁজিবাদী অর্থনীতি নিন্মলিখিত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়:
১. ব্যক্তির সম্পত্তিতে অন্য কারো কোনো প্রাপ্য কিংবা মানবিক অধিকার নেই।
২. অর্থোপার্জনে যেকোনো পথ বা পন্থা সে অবলম্বন করতে পারে।
৩. সম্পদের মালিক নিজ ইচ্ছামতো তার সম্পত্তি খরচ করতে পারবে।
৪. জনসাধারণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে একজন যত ইচ্ছা সম্পদ সঞ্চয় করতে পারে।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণে বুঝা যায় পুঁজিবাদের ইতিহাস শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, অন্যায় যুদ্ধ-সংঘাতের ও রক্তাক্তের ইতিহাস।
পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষকে বল্গাহীন স্বাধীন, নিপীড়ক, স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী করে তোলে।
মোটকথা ,ব্যক্তি স্বার্থটাই পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।

পক্ষান্তরে ইসলামী অর্থনীতি পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয় সাধন করে প্রকাশ করেছে জনহিতকর, সুষম ও সর্বযুগোপযোগী অর্থনৈতিক দর্শন। ইসলামী অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হলো সর্বক্ষেত্রে ইনসাফসম্মত বণ্টন।

ইসলামী অর্থনীতিতে সমাজতন্ত্রের মতো আবেগ কিংবা পুঁজিবাদের মতো স্বার্থপরতা কাজ করেনি।বরং মানুষের বাস্তবিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একজন ব্যক্তির পরিপূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে কিভাবে সম্পদ ব্যবহারের ভারসাম্য রক্ষা করা যায় সে নিয়মনীতি একমাত্র ইসলামি অর্থনীতি-ই বাতলে দিয়েছে।

ইসলাম বিশ্বকে উপহার দেয় ভারসাম্য অর্থনীতির পাঠ।এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় আধুনিক যুগে ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে,বিশ্বে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রগতি।মুছে যাবে ধনী ও গরীবের আকাশচুম্বী ব্যবধান।

ইসলাম যে অর্থনীতিতে সব মতবাদকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে গেছে, তার উদাহরণ মিলবে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকালে ও খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকালে।

রাসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন তখন মদিনাবাসী ছিল কৃষক। অর্থনীতিতে দরিদ্র। শিক্ষায় জ্ঞানহীন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য, ইতর, নিকৃষ্টলোক, শোষণ-শাসন যাদের মজ্জাগত স্বভাব।
একটা সময় তারা মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহচর্য পেয়ে তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে উঠল।গরিব-কৃষক-মজদুর অর্থনীতিতে হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী।

অর্থনীতিতে সফল সমৃদ্ধি পেতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা দিলেন ১০ দফা কর্মসূচি।
১. হালাল উপায়ে উপার্জন ও হারাম পথ বর্জন।
২. সুদ উচ্ছেদ।
৩. ব্যবসায়িক অসাধুতা উচ্ছেদ।
৪. যাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন।
৫. বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা।
৬. মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন।
৭. ওশরের প্রবর্তন ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার ইসলামীকরণ। ৮. উত্তরাধিকার ব্যবস্থার যৌক্তিক রূপদান।
৯. রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপ বিধান।
১০. নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন।

নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে দেখবেন ইসলামি অর্থনীতি সার্বজনীন, জনহিতকর ও সুষম বন্টননীতি প্রতিষ্ঠার অর্থনীতি।ইসলামি অর্থনীতি গরীবের মুখে হাসি ফুটানোর অর্থনীতি।ইসলামি অর্থনীতি শ্রমজীবি মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার অর্থনীতি।

তাই আসুন সমাজ ও রাষ্ট্রে ধনী-গরীব ব্যবধান ঘুচতে, সবার অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পুঁজিবাদী অর্থনীতির অসারতা অনুধাবন করি। ইসলামি অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলি।

“জয় হোক ইসলামি রাজনীতির, প্রতিষ্ঠিত হোক ইসলামি অর্থনীতি”

লেখকঃ শরীফুল ইসলাম রিয়াদ
কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%81%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2/

0 Comments