ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মুফতি সালাহুদ্দীন আইয়ুবী: 

যাকাত ইসলাম ধর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ৷ এটি ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের একটি ৷ ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ৷ অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ৷ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নামাজের বহুবার নামাজের সাথে যাকাতের উল্লেখ করেছেন ৷ এতে যাকাতের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে ৷ যাকাত অস্বীকারকারী ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে কাফের যায় ৷
আর যারা যাকাত আদায় থেকে বিরত থাকে তার সাথে যুদ্ধ করা শরীয়তের বিধান ৷ যেমন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যাকাত আদায় অনীহা প্রকাশকারীদের সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কসম যদি তারা একটি রশিও আমাকে দিতে অস্বীকার করে য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাত হিসেবে প্রদান করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো ” এছাড়াও যারা নিজেদের সম্পদের পরিপূর্ণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাকাত আদায় থেকে বিরত থাকে মহান আল্লাহ তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ৷ জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ৷ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যেসব লোক নিজের কাছে স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তাতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না (হে রাসুল)তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ জানিয়ে দিন ৷ অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে রাখে কিন্তু তা আল্লাহর রাহে ব্যয় করে না তাদের জন্য ভয়াবহ আযাব অপেক্ষমান ৷
অতঃপর পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ নিজেই শাস্তির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন,
“সেদিন স্বর্ণ-রৌপ্য আগুনে উত্তপ্ত করা হবে অতঃপর তা দ্বারা সেই ব্যক্তির কপাল,পার্শ্বদেশ এবং পিঠের উপর দাগ লাগানো হবে ৷ (সেইসঙ্গে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হবে) এই হল তোমার সেই সম্পদ যা তুমি জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং আজ তোমার সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ আস্বাদন করো ৷ (সুরা তাওবা আয়াতঃ ৩৪, ৩৫)
যাকাত আদায় না করার এমন ভয়াবহ পরিণাম থেকে উপলব্ধি করা যায় ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব কোন পর্যায়ের ৷
যাকাত আদায় না করলে এত কঠোরতা কেন?
পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যাকাত না দেয়ার কারণে এত কঠোর সতর্কবাণী কেন উচ্চারণ করা হয়েছে?
তো এর কারণ হলো যে, মানুষ যে সম্পদ উপার্জন করে চাই তা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হোক ৷ চাকরি-বাকরি বা কৃষি কাজ করেই হোক অথবা অন্য যেকোন মাধ্যমেই হোক সামান্য চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, এই সম্পদ মানুষ নিজ শক্তি-সামর্থ্য এবং ক্ষমতা বলে অর্জন করতে পারেনি বরং এ সম্পদের প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা ৷ তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ৷ অতঃপর মানবজাতিকে ভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন ৷ সূরা ইয়াসীন এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
“তারা কি দেখে না, তাদের জন্য আমি আমার নিজ হাতে তৈরী বস্তু দ্বারা চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি ৷ অতঃপর তারা এগুলোর মালিক ৷ (সূরা ইয়াসিন: আয়াত-৭১)
প্রকৃত মালিক তো আল্লাহ তাআলা ছিলেন এবং আছেন ৷ তিনি মানবজাতিকে এ সমূদয় সম্পদের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন ৷ যে সম্পদ মানবজাতির হস্তগত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হক হল আল্লাহ তাআলার ৷ অতএব সম্পদ ব্যয় করতে হবে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মোতাবেক ৷
যখন আল্লাহ প্রদত্ত্ব সম্পদ তারই নির্দেশনা মোতাবেক খরচ করা হয় তো অবশিষ্ট সম্পদ মানুষের জন্য হালাল এবং পবিত্র বলে গণ্য হয় এবং তা মানবজাতির জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত ৷ এমন সম্পদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বারাকাত ৷ আর যদি আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ বের করা না হয়, তাহলে সমুদয় সম্পদ মানুষের জন্য আগুনের অঙ্গার হিসেবে পরিণত হয় ৷ কিয়ামতের ময়দানে আগুনের ভয়াবহতা তখনই অনুধাবন করতে পারবে, যখন তার দ্বারা দাগ লাগানো হবে ৷ আর সেদিন তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে “এগুলো তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা দুনিয়ার বুকে জমা করে রেখেছিলে ৷ আজ তার স্বাদ আস্বাদন কর ৷”
পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব ৷ যাকাত সমাজ রাষ্ট্র থেকে দারিদ্রতা বিমোচন করে ৷ অর্থনৈতিক মন্দা দূর করে ৷ দূর করে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যতা ৷ সৃষ্টি করে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি ৷ সঠিক পদ্ধতিতে যাকাত প্রদান করলে কোন মানুষ অভাবে-অনাহারে থাকবেনা ৷
আসুন আমরা সকলে যাকাত আদায় যত্নবান হয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করি ৷ আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন ৷

লেখক: সেক্রেটারি, ইসলামী যুব আন্দোলন, ফেনী জেলা



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%93/

0 Comments