সদকাতুল ফিতরের বিধান-নিসাব-আদায়; দালিলিক আলোচনা

মুফতি রবিউল ইসলাম:

মানবজাতির উপর আল্লাহ তায়ালা দু’ ধরণের যাকাত আবশ্যক করেছেন।
এক,তাদের অর্জিত সম্পদের উপর,যাকে সাধারণত যাকাত বলা হয়।
দুই,মানুষের শরীরের উপর,যাকে সদকাতুল ফিতর বলা হয়।
রোযা পালনের ক্ষেত্রে রোযাদারের ভুল-ত্রুটি,অহেতুক কথাবার্তা,অশ্লীল কর্মকান্ড ইত্যাদির ক্ষতিপূরণের নিমিত্তে এবং অসহায়দের প্রয়োজন পূরণের লক্ষে সদকাদুল ফিতরের বিধান আরোপিত হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত-
“রাসুল সা. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন রোযা পালনের ক্ষেত্রে অশ্লীল কথা ও অহেতুক কাজের ক্ষতিপূরণ এবং মিসকিনদের খাদ্যের চাহিদা পূরণস্বরূপ।” -আবু দাউদ : ১৬০৯
সদকাতুল ফিতরের বিধান ও নিসাব
সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। যে মুসলমানের ঈদের রাত সুবহে সাদিকের সময় নিজের,পরিবারের ও অধিনস্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় খোরপোষ ব্যতীত অতিরিক্ত সম্পদ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ হবে, তার উপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। অতিরিক্ত এ সম্পদের ক্ষেত্রে যাকাতের ন্যায় বর্ধণশীল ও বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়।
বিধায় ঘর বোঝাই আসবাবপত্র, অপ্রয়োজনীয় অসংখ্য বস্ত্রাদি ও অন্যান্য বস্তুর সামষ্টিক মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয়, তাহলেও সদকাতুল ফিতর আবশ্যক হবে।
সদকাতুল ফিতর প্রত্যেক গোলাম,আযাদ,পুরুষ,নারী,বালেগ,নাবালেগ- সবার ক্ষেত্রে ওয়াজিব। অবশ্য গোলাম ও অধিনস্তদের সদকা তাদের মনিব ও অভিভাবকগণ আদায় করবে। -বোখারী : ১৫০৩
স্ত্রী ও বালেগ ব্যক্তির সদকা তাকেই আদায় করতে হবে। তবে স্বামী কিংবা পিতা যদি স্ত্রী ও বালেগ সন্তানের সদকা স্বেচ্ছায় আদায় করে দেয়,তাও যথেষ্ট হবে। -ফতোয়া শামী : ৩/৩৭০
সদকাতুল ফিতর কখন আদায় করবে?
ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বক্ষণে সদকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব।
হযরত ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সা. ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। -বোখারী : ১৫০৩
ঈদের দিনের পূর্বে মাহে রমজানে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। হযরত রাফি’ রহ. থেকে বর্ণিত, হযরত ইবনে উমর রা. ঈদের এক-দুইদিন পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। -আবু দাউদ : ১৬১০
এমনকি প্রণিধানযোগ্য মতানুসারে মাহে রমজানের পূর্বে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে।
-ফতোয়া শামী : ৩/৩৭৭, আহসানুল ফতোয়া : ৪/৩৭৪
সদকাতুল ফিতর কি দিয়ে আদায় করবে!
রাসুল সা. এর যুগে সাহাবারা সাধারণত খেজুর,যব,কিসমিস,পনির- এ চার বস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (কেননা সে যুগে খাদ্য হিসেবে এগুলোরই প্রচলন বেশি ছিল।) – তিরমিযি : ৬৭৩
গম বা আটা দিয়ে আদায় করার কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। -আবু দাউদ : ১৬১৯, -তিরমিযি : ৬৭৪
তবে শুধু হাদিসে বর্ণিত বস্তু নয়;বরং নিসাবের মূল্য নির্ধারণ করে যে কোনো বস্তু ও নগদ টাকা দ্বারা সদকা আদায় করা যাবে।
যে বস্তুর মাধ্যমে আদায় করলে গরিবের উপকার বেশি হবে,তা দেয়াই বেশি উত্তম। সে হিসেবে বর্তমানে যেহেতু গরিবদের বস্তুর তুলনায় প্রয়োজন মেটাতে টাকা বেশি প্রয়োজন,তাই টাকা দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম হবে।
হযরত মুআয রা. ও হযরত উমর রা. থেকে এ মর্মে আমল বর্ণিত হয়েছে। -বোখারী : ১৪৪৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৬/৫২২
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
রাসুল সা.যেসব বস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন, ঐসব বস্তু দ্বারা যদি কেউ সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে সে পরিমাণই আদায় করতে হবে, যে পরিমাণ রাসুল সা. করেছেন।
তাই কিসমিস,যব,খেজুর ও পনির দ্বারা আদায় করলে অবশ্যই এক সা’ তথা সাড়ে তিন কেজি পরিমাণ আদায় করবে। – বোখারী : ১৫০৫
গম-আটা দিয়ে আদায় করতে চাইলে আধা সা’ তথা পোনে দুই কেজি গম-আটা দিয়ে আদায় করবে। -তিরমিযি : ৬৭৪, মুসনাদে আহমদ : ২৬৯৩৬
টাকা দিয়ে আদায় করতে চাইলে হাদিসে বর্ণিত যে কোনো বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করে তার সমপরিমাণ টাকা সদকা করবে।-ফতোয়া শামী : ৩/৩৭৩, ফতোয়া উসমানী : ২/৭৭
উল্লেখ্য : এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদিসে বর্ণিত বস্তুর মূল্যমান অনুপাতে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে।

লেখক: প্রধান মুফতি, জামিয়া সিরাজিয়া দারুল ইসলাহ,ঢাকা



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a6%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b8/

0 Comments