উলামা হজরাতের প্রতি খোলা চিঠি !

আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ!
জাতীর এই ক্রান্তিকালে নিশ্চই আপনি উম্মাহের চিন্তায় সময় অতিক্রম করছেন।

মুহতারাম,
করোনার কারণে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে। কয়েক কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে ক্ষুধার্ত সময় কাটাচ্ছে। উপার্জনের নিয়মিত উপায় হারিয়েছে আরো কয়েকশ কোটি মানুষ। করোনার পরে একটি অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে বিশ্বের প্রায় সকল বিশেষজ্ঞ একমত। বাংলাদেশের অবস্থাও কতটা খারাপ তা আপনারাই দেখছেন।

মুহতারাম,
আপনি নিশ্চই জানেন যে, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বেকার সময় কাটাচ্ছে। আলেমদের বড় একটি অংশ আর্থিক সংকটে খেয়ে-না খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে। অনলাইনে দেখতে পাই আলেমদের নাম করে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরন করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির যে অবস্থা তাতে আরো কতদিন এই অবস্থা চলবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। এর অর্থ হলো, লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কেরামের ভবিষ্যত সম্পুর্ন অনিশ্চিত।

মুহতারাম,
দ্বীনি শিক্ষার ধারা বিস্তৃত করা এবং আলেমদের একনিষ্ঠভাবে ইলম প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত রাখতেই হয়তো মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কোন রকম বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেয়া হয় না এবং কওমী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক কর্মে নিয়োজিত হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাড়িয়েছে তাতে এখন আর এই ধরনের মনোভাব পোষন করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কারণ দারিদ্র্যের কষাঘাতে ইমানও যে হুমকির মুখে পড়ে তা নিশ্চই আপনি জানেন। ইমান না হোক দারিদ্র্যের কষাঘাতে উলামাদের শানের যে সর্বনাশ হচ্ছে সেটা আশা করি আপনাদের দৃষ্টি এড়ায়নি।

মুহতারাম,
এমত পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরামকে যেকোন বৃত্তিমূলক কাজে জড়িয়ে নিজের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করার মতো উপার্জন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

কিন্তু এখানে দুইটা সমস্যা আছে।
১. বৃত্তিমূলক কোন কাজে জড়িত হওয়ার সংকোচ ও দ্বিধা।
২. পুঁজি ও অভিজ্ঞতার অভাব।

মুহতারাম,
এই দুই সমস্যা থেকে উত্তোরনে জন্য আপনাদের কাছে দুইটা আবেদন করছি।

১. আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে উলামায়ে কেরামকে বৃত্তিমূলক কাজের জন্য উৎসাহিত করুন।

২. একটি কর্জে হাসানা ফান্ড গঠন করুন। এক্ষেত্রে অন্তত চারটা পন্থা হতে পারে।

ক.
আমরা জানি গুটিকয়েক বাদ দিয়ে দেশের সবগুলো বড় শিল্পগোষ্ঠির সাথেই কোন না কোন আলেমের সুসম্পর্ক আছে। আপনারা তাদেরকে বলে কর্জে হাসানা ফান্ডে অর্থায়ন করার ব্যবস্থা করতে পারেন।

খ. এর পাশাপাশি দেশে এখন অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংক আছে। প্রত্যেকটা ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ড আছে। যার দায়িত্বে কওমী উলামারাই আছেন। আপনারা সেই ব্যাংকগুলোকেও বিনাসুদে মুশারাকা, মুদারাবা বা অন্য কোন হালাল পদ্ধতিতে উলামায়ে কেরামের জন্য পুঁজির ব্যবস্থার জন্য বলতে পারেন।

গ. বাংলাদেশ সরকারের সাথেও হাইয়াতুল উলইয়া নেতৃবৃন্দের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আপনারাও হাইয়ার পক্ষ থেকে সরকারকে উলামায়ে কেরামের জন্য কর্জে হাসানা ফান্ড গঠনের জন্য অনুরোধ করে কর্জে হাসানা ফান্ড গঠন করতে পারেন।

ঘ. এগুলোর একটিও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত নিজস্ব পরিসরে কথা বলে এক বা দুইজন আলেমের জন্য সামান্য হলেও পুঁজি সংগ্রহ করে দিতে পারেন।

মুহতারাম,
কর্জে হাসানা বিতরন করার জন্য এবং আলেমদের প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষিত করার জন্য অনেক রকম প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে। যা এই করোনা কালেও অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আপনারা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন তো এগুলো কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।

মুহতারাম,
এই আবেদন কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে নয়। কোন দলেরও কাছে নয়। আপনি যদি নিজেকে আলেম সমাজের মধ্যে গন্য করেন তাহলে আপনার কাছেই এই আবেদন। অর্থায়নের উপর্যুক্ত চারটি পন্থার কোনটিও যদি আপনার সামর্থের মধ্যে না থাকে তাহলেও অন্তত আপনি আপনার পরিচিত জনদের সাথে আলোচনা করুন। তাদের কেউ হয়তো এমন কাউকে চেনে যার এগুলোর সামর্থ আছে। আপনার আলোচনাও হয়তো এই উদ্দেশ্যে গতি সঞ্চার করবে।

মুহতারাম,
বিট্রিশরা ওয়াকফ সম্পত্তি বাতিলের এক আদেশে তৎকালীন ভারত উপমহাদেশকে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুক্ত করেছিলো। আল্লাহ না করুক এই করোনার কারণেও বাংলাদেশের লাখো ছোট ছোট মাদ্রাসা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কেরাম দারিদ্র্যের কষাঘাতে মর্যাদাহানীর শিকার হতে পারে।

মুহতারাম,
আমার আপনার চেষ্টায় যদি উলামায়ে কেরাম স্বাবলম্বী হয়ে উপার্জন যোগ্য হয়ে ওঠে তাহলে আগামীর বাংলাদেশে উলামায়ে কেরাম নব উদ্যোমে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে ঘুরে দাড়াবে ইনশা আল্লাহ।

মুহতারাম,
আপনি নিশ্চই এখনো এই কথা মনে করেন না যে, সীমিত পরিসরে ধর্মীয় কাজ পরিচালনা করা ও ইলিম পুনঃচর্চা করাই কওমী শিক্ষার্থী ও ফারেগিনদের একমাত্র কর্মক্ষেত্র এবং এর বাইরে আয়-রোজগারের জন্য অন্য কিছু করা হালাকি!!

এবং নিশ্চই একথাও বিশ্বাস করেন না যে, উলামায়ে কেরাম নির্দিষ্ট কিছু কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারবে না। কারণ আপনি জানেন যে, নবীগন ও আমাদের আকাবিরগন জুতো সেলাই থেকে নিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য সবই করেছেন।

মুহতারাম,
আপনি নিশ্চই মনে করেন না যে, ছোটখাট কাজ করলে উলামাদের সম্মান চলে যাবে। কারণ আপনি তো জানেন, মুসলমানদের সম্মানের ভিত্তি হলো, তাকওয়া, আত্মমর্যাদা ও অমুখাপেক্ষী মনোভাব।

মুহতারাম,
অতএব এই মুহুর্তেই আপনি দয়া করে সিদ্ধান্ত নিন। এবং উলামাদের উৎসাহিত করে কর্জে হাসানার ব্যবস্থা করে দিন।

ওরাসাতে আম্বিয়ার যে দাবী আপনি করেন তার যথার্থতা প্রমাণ করুন। উলামায়ে কেরামকে ত্রাণ খাওয়া থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%89%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%b9%e0%a6%9c%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%96%e0%a7%8b%e0%a6%b2%e0%a6%be/

0 Comments