অসহায়দের পাশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫ নং মহামায়া শাখা

ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাসান।

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার (সুরা বাকারাহ আয়াত ১৭৭)

কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাসের অশুভ ছোবলে আজ আক্রান্ত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। প্রায় ৩ সপ্তাহের অধিক পর্যন্ত জনজীবন স্থবির হয়ে আছে। ইতিমধ্যে সরকার সময় আরো বর্ধিত করেছে এবং কেউই জানিনা এই লকডাউন কখন শেষ হবে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষগুলো। যারা “দিন এনে দিন খেয়ে” জীবিকা নির্বাহ করে তাদের করুন আর্তনাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই/তিন দিন যাবত এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসহায় এই মানুষগুলোর পাশে দাড়াঁনোর জন্য আমাদের কাছে নানারকম আবেদন-নিবেদন আসছে।করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সারাদেশে ইসলামী আন্দোলন,যুব আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী গনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী লিফলেট, মাইকিং, হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক, সাবানসহ নানাবিধ উপকরণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আরও বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থের সীমাবদ্ধতায় কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। তারই ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইসলামি আন্দোলন ৫ নং মহামায়ার শাখার পক্ষ থেকে আমরা খাদ্য সংকটে নিপতিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম।

ইসলামি আন্দোলন অন্যসকল রাজনৈতিক দলের মত লোক দেখানো ত্রাণ বিতরণ করবেনা, বরং আমাদের মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয়েছে মহামায়ার সবচেয়ে হতদরিদ্র লোকগুলোকে যাদের কোন ওয়াসায়েল নেই (অর্থাৎ যাদের কোন কিছু নেই, দেখার কেউ নেই এবং যারা প্রকৃত অর্থে এই লকডাউনে কষ্ট করছে) তাদের খুজে বের করবো। তাদের হাতে উপহার পৌছিয়ে দিবে। মানুষের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যিনি উপহার গ্রহণ করবেন, তার ছবি স্যোশাল মিড়িয়াতে দেওয়া হবেনা । এরপর আসে আমাদের ফান্ডিং এর বিষয়। আলহামদুলিল্লাহ, লকডাউনে যদিও সবাই বেকার, তদুপরি আমাদের দেশে প্রবাসের সদস্য, কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের আহবানে সাড়া দেয়।

আমরা ধর্ম, বর্ণ ও দলমতের উর্ধ্বে উঠে প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষদের পাশে দাড়াতে চাই। তাই সিদ্ধান্তক্রমে আমাদের একটি টিম পুরো মহামায়ার মহল্লার ইমাম, সভাপতি , সেক্রেটারী ও এলাকার সৎ ব্যাক্তিদের সহায়তায় ঐ সমস্ত লোকজনদের সন্ধানে বেরিয়েছিল, যাদের নিম্নোক্ত ৩ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে :
১)যাদের কেউ খোজ নেয়না ;
২)যাদের কেউ নেই ;
৩) যাদের জীবিকা নির্বাহের কোন মাধ্যম নেই।

এদেরকে খুজে বের করতে আমাদের বিশেষ টিম পুরো এলাকা চষে বেড়িয়েছিল। এই পরিসংখ্যান টিমে যারা ছিলেন তারা হল, মাওলানা আহসানুল্লাহ সভাপতি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মহামায়া শাখা , মাও আব্দুল হালিম সেক্রেটারী মহামায়া শাখা , মাওলানা আলিম মজুমদার সেক্রেটারী ওমান সালালা শাখা ও মাও মাজহারুল ইসলাম সেক্রেটারী সাউদ আফ্রিকা শাখা ।

অনলাইনেও আমরা তালিকা সংগ্রহের প্রচারণা চালিয়েছি এবং বলেছি সবার পরিচয় গোপন রাখবো। যেন মানুষ স্বতঃস্পূর্তভাবে তালিকা আমাদের নিকট পাঠায়। এর দায়িত্বে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, হাফেজ জুনায়েদ উপদেষ্টা ইসলামি আন্দোলন সাউদ আফ্রিকা এবং পরামর্শ পরিষদের সদস্য ইসলামি যুব আন্দোলন , ইঞ্জিনিয়ার হেলাল মজুমদার , কাজী আরাফাত ও ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাছান ইউরোপের Global Peace Movement (GPM) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ইসলামি যুব আন্দোলন এর পরামর্শ পরিষদের সদস্য ।

আলহামদুলিল্লাহ, এই উভয়টিম ম্যানুয়ালি ও ভার্চুয়ালি সফল ও সুচারুভাবে উনাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন।
এরপর ছিল বাচাই পর্ব, এই ক্ষেত্রে চাহিদার গুরুত্বের ক্রমানুসারে এবং মহল্লার ভিত্তিতে আমরা শ্রেণী বিভাগ করি। যখন তালিকা সম্পূর্ণ হয়ে যায় তখন সভাপতি ও সেক্রেটারী এটাকে অনুমোদন দেন। এরপর আমাদের যে ফান্ড ছিল সে হিসেবে আমরা ১০০ পরিবারকে দেওয়ার সামর্থ্য রাখি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক উপায়ে করা এই তালিকাতে ১৩৫ জন উঠে আসে যা থেকে আমরা একজনকেও বাদ দিতে অসমর্থ ছিলাম। তাই আমাদেরকে পুনরায় অর্থের যোগান দিতে হয়েছে। এরপর সবার সিদ্ধান্তক্রমে ৭ টি আইটেম ক্রয়করি, সেগুলো হল, চাল, তৈল, আলু, মশুরের ডাল, চোলা বুট, চিড়া।

৫ নং মহামায়া

এরপর মহামায়ার সকল সদস্যকর্মী স্বেচ্ছাশ্রমে প্যাকেট তৈরীতে অংশ নেয়। যারা অংশ নেন তারা হল, সাদ্দাম হোসেন, মোবারক হোসেন ইমন,
মেহেদী হাসান নিশান,রিয়াজ উদ্দিন মাহমুদ (শাকিল), মুফতি আব্দুল গণি, ইঞ্জিনিয়ার হেলাল মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার মুন্সি কামরুল হাছান, মোহাম্মদ আরিফ, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা আলিম মজুমদার, মাওলানা ইকবাল হোসেন, মাওলানা আহসান উল্লাহ… ইত্যাদি।

মহান রবের দরবারে অবনত মস্তকে শুকরিয়া আদায় করছি যে, মানুষের আমানাহ আমরা যথাযথ হকদারের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছি।  লকডাউনে খাদ্যসংকটে নিপতিত ব্যাক্তিদের নিকট মাহে রমজানের হাদিয়া পৌছে দিতে
আমাদের ২টি টিম বৃষ্টি, কাঁদা ইত্যাদি উপেক্ষা করে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। দীর্ঘ পথ, গাড়িতে, হেঁটে, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে । এই কার্যক্রম চলেছিল বিকাল থেকে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত । এটা ইসলামি আন্দোলনের সাথে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর পার্থক্য।

আমরা দলীয় বিবেচনায় লোকদেখানো ত্রাণের কিছু অংশ বিতরণকারী দল নই, বরং নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া রাজনৈতিক দল। এবং মানুষের মর্যাদার সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ছবি ঢেকে দিয়েছি ।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ৫ নং মহামায়া, চাঁদগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী স্মার্টলি যেইভাবে ত্রাণ কার্যক্রম করেছে তা সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%85%e0%a6%b8%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80-%e0%a6%86%e0%a6%a8-2/

0 Comments