ড. তুহিন মালিক।
আলহামদুলিল্লাহ। আমরা সবাই কোরআন পড়তে পারি আর না পারি। কিন্তু কোরআনের জন্য আমাদের সবার অন্তরে রয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। নামাজ পড়ার জন্য সূরা ফাতিহা সহ বেশ কিছু সূরা আমরা প্রায় সকলেই মুখস্ত জানি। আমরা আবার কোরআন খানি করে তার সওয়াব মৃত বাবা-মাকে পৌঁছাচ্ছি। কিন্তু কোরআন কি শুধুই কয়েকটি সূরা মুখস্তের জন্য নাজিল করা হয়েছে? কোরআন কি মৃতের জন্য। নাকি জীবিত মানুষের জন্য?
কোরআন আল্লাহ কোন উদ্দেশ্যে নাজিল করেছেন। আমরা কি সেটা জানি? আল্লাহ বলছেন: ‘কোরআন সমগ্র মানব জাতির জন্য হেদায়াত, সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী ’[বাকারা:১৮৫]
‘এটি বরকতপূর্ণ। এতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং নিষিদ্ধ সীমা পরিহার করে চল। তবেই তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে।’[আনআম:১৫৫]
‘যেন বুদ্ধিমান লোকেরা একে গভীর ভাবে অধ্যয়ন ও চিন্তা-ভাবনা করে।’[ সোয়াদ:২৯]
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে। আমরা যারা কোরআনের অর্থ জানিনা। কিংবা বুঝিনা। তারা কিভাবে কোরআনের নির্দেশনাকে ’’অনুসরণ’’ করবো? আর কিভাবেই বা কোরআনকে ’’গভীর ভাবে অধ্যয়ন ও চিন্তা-ভাবনা’’ করবো?
আল্লাহ মাফ করুন। অর্থ না বোঝার কারনে আল্লাহর কালাম কোরআনকে আমরা একটি অত্যন্ত জটিল অপরিচিত গ্রন্থ বানিয়ে ফেলেছি! অথচ আল্লাহ নিজেই বলেছেন: ‘নিঃসন্দেহে এ কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা একেবারেই সহজ-সরল।’[বনি ইসরাইল : ৯]
যেকোন গ্রন্থ পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে জানা। কিন্তু গ্রন্থটি যদি এমন ভাষায় লিখিত হয়। যা আমরা জানি না। তাহলে আমরা গ্রন্থটির অনুবাদ জানার চেষ্টা করি। কারণ অর্থ না জানলে গ্রন্থাকার কী বলতে চান তা আমরা কীভাবে বুঝব?
কেউ যদি নিয়মিতভাবে এমন একটি বই পড়ে যে বইটির ভাষা সে জানে না। কি লেখা আছে কিছুই বোঝে না। কিন্তু গ্রন্থটি সে খুবই শুদ্ধ করে পড়তে পারে। অথচ তার অর্থ কিছুই জানে না। জানার চেষ্টাও করে না। আবার সেই ব্যক্তি দাবী করে যে, সে ঐ গ্রন্থকে এবং গ্রন্থের লেখককে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। অথচ সেই লেখকের কোন নির্দেশনাই বোঝে না। আবার না বোঝার কারনে মানতেও পারে না। এমতাবস্থায় ঐ গ্রন্থ ও গ্রন্থ-প্রণেতার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দাবী কতটা গ্রহণযোগ্য হবে?
আমরা যারা আরবি ভাষার অর্থ জানি না। তারা যদি কোরআনের অর্থ জানার চেষ্টা না করে শুধুই তেলাওয়াত করি।আলহামদুলিল্লাহ তাহলেও অফুরন্ত সওয়াব হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাতে কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য বা কোরআন পড়ার হক কতটুকু আদায় হবে! -তা কি কখনও ভেবে দেখেছি? আল্লাহ কোরআনকে নাজিল করেছেন কোরআনের শিক্ষাকে জানা ও বুঝার জন্য। কোরআনের শিক্ষাকে যদি না-ই জানি। না-ই বুঝি। তাহলে কোরআন থেকে কি করে হেদায়াত নেয়া সম্ভব?
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন :
‘এটা কি করে সম্ভব হতে পারে যে, যে ব্যক্তি তোমার আল্লাহর এই কিতাবকে, যা তিনি তোমার প্রতি নাযিল করেছেন, সত্য বলে জানে; আর যে ব্যক্তি এ মহাসত্য সম্পর্কে অজ্ঞ-অন্ধ; তারা দুজনই সমান হতে পারে? উপদেশ তো বুদ্ধিমান লোকেরাই কবুল করে থাকে।’ [সূরা রা’দ : ২০]
আজকে আমরা আল্লাহর ঐশী গ্রন্থ না বোঝার কারণেই কোরআনকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারছিনা। আল্লাহর হুকুমকে বাদ দিয়ে মানুষের হুকুমের অধীনে চলে গেছি সবাই! অথচ এ সম্পর্কে আমাদের ভাবাবেগটা পর্যন্ত যেন আজ মরে গেছে। যেমনটা আল্লাহ বলেছেন:
‘আমি যদি এই কোরআনকে কোন পাহাড়ের উপরও নাযিল করতাম, তাহলেও তুমি দেখতে যে, সে পাহাড় আল্লাহর ভয়ে কেমন বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে! এই দৃষ্টান্ত গুলো আমি এ জন্য দেই, যেন লোকেরা নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে।’-[হাশর : ২১]
মহাগ্রন্থ আল কোরআন এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ যার শাব্দিক অর্থ না জানা সত্বেও শত কোটি মানুষ পরম আবেগ, আনন্দ ও তৃপ্তির সাথে প্রতিদিন তেলাওয়াত করছে। অপরিসীম সওয়াব লাভ করছে। আধ্যাত্মিক ভাবে অশেষ উপকৃতও হচ্ছে। এটাও বরকতপূর্ণ এই ঐশীগ্রন্থের একটি অন্যতম মোজেজা। তবে, শুধুমাত্র তেলাওয়াত করে সওয়াব কামাইয়ের জন্যই কি এ মহাগ্রন্থটি অবতীর্ণ হয়েছে?
ইসলাম জীবনমুখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক একটি পূর্নাঙ্গ বাস্তবিক জীবন বিধান। মূর্খতা ও বৈরাগ্যবাদের সাথে ইসলামের কোনরকমের সম্পর্ক নেই। তাই আমাদেরকে আত্মজিজ্ঞাসা করতে হবে।চিন্তা-গবেষণা ও বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ যারা জ্ঞান-বিমুখ তারা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে কি করে ভাববে? কি করে চিন্তা-গবেষণা করবে?
যেমনটা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন :
‘….তাদের অন্তর আছে কিন্তু তারা তার সাহায্যে চিন্তা-ভাবনা করে না; তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না; তাদের শ্রবনশক্তি আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা আসলে জন্তু-জানোয়ারের মত; বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত। এরা চরম গাফলতির মধ্যে নিমগ্ন।’ – [আরাফ : ১৭৯]
‘….তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বলে, আমরা শুনলাম; কিন্তু আসলে তারা শোনে না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম পশু, বধির ও বোবা হচ্ছে সেসব মানুষ, যারা নিজেদের বিবেক ও বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না..।’ -[আনফাল : ২০-২৩]
বিশ্বব্যাপী আজ মুসলমানদের যে বিপর্যয়। তা আল্লাহর কালামকে তার ন্যয্য ও কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা না দেবার কারনে। আমরা যখন থেকে কোরআনকে ছেড়ে দিয়েছি, বিজয়ও তখন থেকেই আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%80-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac/
0 Comments