মোস্তাফিজের জন্য শোকগাথা

দেশ দুনিয়া নিউজ
মোস্তাফিজের জন্য শোকগাথা

প্রিয় মোস্তাফিজ!
আশা করি, পরপারে পরম সুখে আছো। মহান রবের দেয়া প্রতিশ্রুতি মতে তুমি ভাইয়া মৃত নও। জীবিতই রয়েছ। রবই তো বলেছেন- “আর আল্লাহ্‌র পথে যারা নিহত হয় তাদের কে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।” [সুরা বাকারা-১৫৪]

মহানবী সা. এর দেয়া সুসংবাদ অনুযায়ী তুমি জান্নাতে সবুজ পক্ষী হয়ে উড়ে বাড়াচ্ছো। রাসুল সা.-ই তো ইরশাদ করেছেন- “শহীদগণের রূহ সবুজ পক্ষীর প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়ায়। তারপর তারা আরশের নীচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে।…” [মুসলিম: ১৮৮৭]

প্রাণের মোস্তাফিজ!
তুমি সাধারণ কোনো ছাত্র নও! তুমি ছিলে চট্টলার ছাত্র সমাজের অভিভাভক। তোমার নিরলস পরিশ্রম চোখের সামনে ভাসছে। তোমার স্মৃতিগুলো আজ খুব বেশি নাড়া দিচ্ছে। অনেক শোকগাথাই লিখতে চাই। কিন্তু চোখ অন্ধকার হয়ে আসে লিখতে পারি না।

আদরের মোস্তাফিজ!
এই ঘুণে ধরা তোমারও স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোয়া। মুহিউচ্ছুন্নাহ হতে সেগুনবাগান মাদরাসায় পদেপদে তোমার স্মৃতি। তারপর দারুল মাঅারিফ হতে তুমি হাটহাজারী মাদরাসায় দাওরা পড়েছিলে। ফাযিল ও অনার্স একসাথে সুনামের সাথে এগিয়ে নিচ্ছিলে।

ভাইয়া!
তোমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। একদিকে ফাযিল, অন্যদিকে অনার্স ৩য় বর্ষ। এদিকে “চট্টগ্রাম বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশ”। তুমি ছিলে সমাবেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎফুল্ল। সারারাত পোস্টার, ব্যানার আর ওয়াল রাইটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে। আর সারাদিন দায়িত্বশীল যোগাযোগ আর থানায় সফর করতে। তোমার আগ্রহের কারণেই হয়তো সমাবেশ হয়েছিল। কিন্তু তুমি দেখতে পারোনি। ফাযিলের শেষ পরীক্ষাটা আর দেয়া হলো না। অনার্সের শেষ দুটি পরীক্ষাও আর তুমি দিলে না। দুনিয়ার এই পরীক্ষা কী জন্যে। তুমি যে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে।

বিপ্লবী মোস্তাফিজ!
পুরো শরীরের শক্তি বাহুতে প্র‍য়োগ করে চোখ রাঙ্গিয়ে তোমার সেই তেজোদীপ্ত বক্তব্য আর শোনা হবে না। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তোমার সৃজনশীলতা আজও মনে পড়ে। তুমি নিজের জীবনের চেয়ে ইসলামী আন্দোলনকে বেশি প্রাধান্য দিতে। দ্বীনের জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছো। বড়দের কাছে তুমি ছিলে অানুগত্যশীল ও স্নেহধন্য। তুমি অামাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

প্রিয় সহযোদ্ধা!
আজ যখন তুমি নেই, হঠাৎ করেই চোখ ভিজে আসে। বুকে ব্যথা অনুভব করি। কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। এই চিরচেনা পৃথিবী আজ বিষাদ লাগে। চারিদিকে কী যেন এক মহাশূন্যতা। আজ আমি নিথর। নিস্তব্ধ। সঙ্গীহীন। সহযোদ্ধা হিসেবে তুমি ছিলে খুবই কাছের। তোমার সোহাগমাখা “শামসী ভাই!” ডাকটি আর শোনা হবে না।

প্রিয় ভাইয়া!
আমি তোমার সভাপতি হিসেবে তোমার ছায়া ছিলাম। আগলে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ মুহূর্তটিতে খুব কাছে থেকেও ছায়া দিতে পারিনি। সে রাতে (২৭ অক্টোবর’১৯) সিডিএ ১ নাম্বার হতে হাত ধরে তোমাকে রাস্তা পার করিয়েছি। রাতের খানা নাজিম ভাইসহ একসাথেই খেয়েছি। আর খানা খেয়ে এক বালিশে ৩ সহযোদ্ধা মাথা রেখে ২ ঘন্টা চট্টগ্রাম মহানগর নিয়ে বহু পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি যে, তুমি তোমার অবর্তমানে কাজের জন্য নাজিমকে প্রস্তুত করছিলে। তোমার অসমাপ্ত কাজ নাজিমকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলে।

শেষ কথা:
বহু সময় একসাথে থেকেছি। চলার পথে মনের অজান্তে বহু কষ্ট হয়তো দিয়েছি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। আর আমিও আসছি তোমার পানে। যখন দেখা হবে, হাসি দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিও!

 লেখক: রিদুয়ানুল হক শামসী
সভাপতি, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
চট্টগ্রাম মহানগর

মোস্তাফিজের জন্য শোকগাথা
deshdunianews



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%a5/

0 Comments