করোনা ইস্যুতে মুফতি আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ্ এর কলাম

দেশ দুনিয়া নিউজ
করোনা ইস্যুতে মুফতি আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ্ এর কলাম

 فالحمد لله على نعمة الإيمان، والحمد لله على نعمة الإسلام، رضيت بالله ربا وبالإسلام دينا، وبمحمد صلى الله عليه وسلم نبيا.

সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি আমাদের ঈমানের নিআমত দান করেছেন। ইসলামের নিআমতে ধন্য করেছেন। (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন আমরাও হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি) আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে ধন্য ও সন্তুষ্ট।
বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত মানুষের জীবনে আসতেই থাকে। মুসলিম-অমুসলিম সবার জীবনেই আসে। কিন্তু বিপদাপদে মুমিনের শানই আলাদা।

হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ، صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.
মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয়। সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৮৬৯

যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুমিনকে এই স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন তাই বিপদাপদের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং এসব ক্ষেত্রে তার কর্মপন্থাও স্বতন্ত্র হওয়া উচিত। বিশেষত যখন এক্ষেত্রে শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা বিদ্যমান আছে, যার যথাযথ মূল্যায়ন করা শোকর আদায়ের অনিবার্য অংশ। মহামারি বা যেকোনো ধরনের ব্যাপক বিপদাপদ যেমনিভাবে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের মাধ্যম, তেমনিভাবে তা মুমিনের জন্য মাগফিরাত লাভের উপায়। এসব ক্ষেত্রে মুমিনের প্রথম কাজ হল, ‘আকিদায়ে তাকদীর’ অন্তরে জাগ্রত করা। এই বিশ্বাস রাখা যে, সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হয়। যে কোনো মুসিবত থেকে তিনিই উদ্ধার করেন। জীবন-মরণ ও লাভ-ক্ষতির মালিক তিনিই। মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। কারো মৃত্যু নির্ধারিত সময়ের আগেও হবে না, পরেও হবে না। আরোগ্য তাঁরই হাতে।

আফিয়াত-সালামত এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মালিক তিনিই। ইরশাদ হয়েছে:
مَاۤ اَصَابَ مِنْ مُّصِیْبَةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِیْۤ اَنْفُسِكُمْ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مِّنْ قَبْلِ اَنْ نَّبْرَاَهَا اِنَّ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرٌ لِّكَیْلَا تَاْسَوْا عَلٰی مَا فَاتَكُمْ وَ لَا تَفْرَحُوْا بِمَاۤ اٰتٰىكُمْ وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرِ.
পৃথিবীতে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ।এটা এজন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না। -সূরা হাদীদ (৫৭) : ২২-২৩

قُلْ لَّنْ یُّصِیْبَنَاۤ اِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلٰىنَا وَ عَلَی اللهِ فَلْیَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ.
হে নবী আপনি বলে দিন, আমাদের জন্য আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত। -সূরা তাওবা (৯) : ৫১

তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুমিন তার অন্তরে ঈমানী শক্তি জাগ্রত করবে। আর ঈমানী শক্তির উপস্থিতি ও অনুভূতি যেমনিভাবে ঈমানের উৎকর্ষ সাধন ও আমল-আখলাকের সংশোধনের ক্ষেত্রে উপকারী, তেমনি তা ওয়াসওয়াসা, অমূলক চিন্তা ও আতঙ্ক রোধের সফল ঔষধও; এমতাবস্থায় যা অত্যন্ত জরুরি। রোগ প্রতিরোধে বাহ্যিক শক্তির চেয়ে ঈমানী শক্তিই অধিক ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত, আর ঈমান-ইসলামের বরকতে প্রত্যেক মুমিনের মাঝেই তা আছে। প্রয়োজন শুধু এ শক্তিকে জাগ্রত করা এবং কাজে লাগানো। অতএব তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা ও ঈমানী শক্তি জাগ্রত করা। এসব হল মুমিনের প্রথম কাজ।

দ্বিতীয় কাজ, খাঁটি দিলে তাওবা করা এবং আল্লাহমুখী হওয়া।

সবাই একথা চিন্তা করা যে, এসব বিপদাপদ হয়ত আমার মন্দ আমলের পরিণতি।
وَ مَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِیْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَیْدِیْكُمْ وَ یَعْفُوْا عَنْ كَثِیْرٍ.
আর তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন। -সূর শূরা (৪২) : ৩০
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَیْدِی النَّاسِ لِیُذِیْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِیْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ.
মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে। -সূরা রূম (৩০) : ৪১

ব্যস, এ অবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই প্রত্যেক মুমিনের প্রধান কর্তব্য। আল্লাহর দিকে ফিরে আসার অর্থ হল, শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে আসা; অবাধ্যতা ছেড়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের দিকে আসা, গোনাহ ছেড়ে তাকওয়ার দিকে আসা, আল্লাহ তাআলার প্রতি উদাসীন হয়ে জীবন অতিবাহিত করা থেকে ফিরে আল্লাহর স্মরণের দিকে আসা, মিসকীনের মত আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কান্নাকাটি করা, মাফ চাওয়া ও আফিয়াতের যিন্দেগী প্রার্থনা করা।

প্রতিটি মানুষ এবং প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ নিজ নিজ হিসাব নেবে যে, আমার মধ্যে কী ত্রুটি আছে, আমি আল্লাহর কোন নাফরমানিতে লিপ্ত আছি, আমি আমার খালেক ও সৃষ্টিকর্তার কী হক নষ্ট করছি এবং আল্লাহর মাখলূকের কী কী হক নষ্ট করছি।
আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন, আমিন।

করোনা ইস্যুতে মুফতি আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ্ এর কলাম
deshdunianews



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%ab%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%86%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a7%81/

0 Comments