দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক:
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৯১ইং সনে বিশ্ব ডায়াবেটিস প্রথম এই দিবসটির সূচনা করেন। এই ১৪ নভেম্বর ছিল স্যার ফ্রেড্রিক বান্টিং (Fredrick Bunting) এর জন্ম দিবস। এই এর উপলক্ষ্যে এই দিনটি বেছে নেয়া হয়। স্যার ফ্রেড্রিক বান্টিং (Fredrick Bunting) এবং চার্লস বেস্ট (Charles Best) ছিলেন ইনসুলিন আবিষ্কারক। ১৯২২ সালে নোবেল পুরস্কারে (Nobel Prize) ভূষিত হন।
এই দিবসটি পরিপূর্ণ রূপ লাভ ও কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির প্রাক্তন মহাসচিব এবং বর্তমান ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ একে আজাদ খানের যথেষ্ট ভুমিকা রয়েছে এবং তার চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জ্ঞাত করেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আক্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের সভায় উহা উত্থাপিত হয়। তৎপ্রেক্ষিতে ২০০৬ইং সালে জাতিসংঘ (United Nation) অফিসিয়াল ভাবে এই দিনটি চিহ্নিত করে এবং রেজুলেশন পাশ করেন (Resolution নং-61/225)। এই চিহ্নিত রেজুলেশন প্রতি বৎসর ১৪ই নভেম্বর। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস একটি বৃহত্তম ডায়াবেটিস সচেতনতা প্রচার মাধ্যম। এই সচেতনতার মাধ্যমে পৃথিবীর ১৬০ টিরও বেশী দেশে এক বিলিয়নের ও বেশি লোকের মধ্যে প্রচার হয়।
প্রচারের উদ্দেশ্য:
*সারা বৎসর ডায়াবেটিস সচেতনতা প্রচারের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম (Platform) তৈরী করা।
*বিশ্বের মানুষকে ডায়াবেটিস সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আরও অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
*সুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং এই রোগ প্রতিকারের কলা কৌশল জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি।
এই প্রচারটি একটি স্বীকৃত Blue Circle Logo- যা ২০০৭ সালে জাতিসংঘ রেজুলেশনে পাশ করা হয়। এই Blue Circle এমন একটি নিদর্শন যা সারা বিশ্বের ডায়াবেটিস কমিউনিটি এক জোটে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
প্রতি বৎসরই বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস একটি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রচার করা হয়। এবারের ১৪ই নভেম্বর-২০২০ এর প্রতিপাদ্য বিষয়টি হলো-দি নার্স এন্ড ডায়াবেটিস (The Nurse and Diabetes)। এ বৎসরের প্রতিপাদ্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে নার্সের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
ডায়াবেটিস কী? কত প্রকার? এবং কীভাবে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব?
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র একটি বিপাক জনিত হরমোন জাতীয় রোগ। ইহা একটি নিরব ঘাতক রোগ। এই রোগ তৎক্ষণাৎ মানুষের ক্ষতি করে না। আস্তে আস্তে শরীরের গুরত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো করে ফেলে। ডায়াবেটিস একবার হলে মনে করবেন এটি সারা জীবনের রোগ, তবে ভয়ের কিছুই নেই। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে একজন স্বাভাবিক (নন ডায়াবেটিক) মানুষের মত চলতে পারবেন।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার: টাইপ-১, টাইপ-২। এছাড়া জেসটেশনাল (Gestational) বা প্রেগনেন্সী ডায়াবেটিস এবং সেকেন্ডারী ডায়াবেটিসও আছে।
ডায়াবেটিস এর প্রতিকার বা চিকিৎসার দরকার কেন? ডায়াবেটিস এর জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এর চিকিৎসা দরকার।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (IDF) এর মতে ২০১৭ সালে বিশ্বে ৪২৫ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী বেড়েছে এবং উহা ২০৪৫ সালে ৬২৯ মিলিয়নে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ লাখের বেশী ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে।
বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ডায়াবেটিসের জটিলতায় একজন রোগী মারা যান এবং ঐ এক সেকেন্ডে নতুন করে ২ জন নতুন রোগী জন্ম নেয়। প্রতি ১০ জনে ১ জন করে ডায়াবেটিস রোগী পরিলক্ষিত হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো শতকরা ৫০ ভাগের বেশী রোগী জানে না যে তার ডায়াবেটিস আছে অর্থাৎ উপসর্গ ছাড়াই থাকে। এই ধরণের রোগী মারাত্মক ঝুকির মধ্যে থাকে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো রোগী এমন এক সময় ডাক্তারের কাছে যান যখন রোগীর কিডনীর অকার্যকারিতা, হার্ট এ্যাটাক, পায়ের পচন, চোখের অন্ধত্ব দেখা দেয়। যে কোন বয়সেই ডায়াবেটিস হতে পারে তাই সন্দেহ হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তাছাড়া যাদের অতিরিক্ত ওজন, বংশে ডায়াবেটিস আছে, যাদের শারীরিক পরিশ্রম কম, যারা অতিরিক্ত খাবার পছন্দ করেন অর্থাৎ ভোজন বিলাসী, যাদের বয়স ৪০ এর উর্দ্ধে, যারা সব সময় টেনশনের কাজ করেন অর্থাৎ Stressful অবস্থায় থাকেন, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিসকে এখন হার্ট ডিজিজ বা হৃদরোগ বলা হয়। কারণ ডায়াবেটিস জটিলতার একটি দিক হলো শরীরের রক্তনালীগুলো আক্রান্ত করা।
সচেতনতার মাধ্যম, স্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এবং সুশৃংখল জীবন-যাপনের মাধ্যমে শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশী টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব।
রোগীকে সবসময় বুঝিয়ে বলতে হবে আপনাকে ভাল থাকতে হবে। এই রকম অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে কেউ দেখার থাকবে না। আপনি নিজে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হউন। কারণ সুস্থ থাকা অবস্থায় অসুস্থতার বেদনা কখনও হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়। যেমন কথায় আছে-দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝা যায় না। জটিলতা একবার দেখা দিলে তা আর ভাল হওয়া কঠিন। যেমন একবার কিডনীর কার্যকারিতা নষ্ট হলে তা খারাপের দিকে যেতেই থাকে। একসময় কিডনী ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্ট এর দরকার হয়ে পড়ে। এই ধরনের রোগী পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের তথ্য মতে শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যই প্রতি বছর ৩২৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব :
* প্রথমেই আসে ডায়াবেটিস শিক্ষা, সচেতনতা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন।
* খাওয়ার ব্যাপারে নিজের মন এবং জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
* খাওয়ার নির্ধারিত পরিমাণ এবং সময় ঠিক রাখা।
* নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা।
* অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে কাঙিক্ষত ওজনে নিয়ে আনা।
* শিশুদের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের অতিরিক্ত ভোজন থেকে বিরত রাখতে হবে।
* উচ্চ ক্যালরীযুক্ত (ফাস্ট ফুড) খাবার পরিহার করতে হবে।
* প্রতিটি বাচ্চাকে উপযুক্ত সময়ে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা দান করতে হবে।
*বাচ্চাদের হাত থেকে ট্যাব, মোবাইল, আইপ্যাড বা ল্যাপটপ দুরে রাখতে হবে এবং শারীরিক পরিশ্রম বা খেলার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
*চিকিৎসকের পরামর্শ মতে চলা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা ধরে রাখতে হবে।
*বর্তমানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে উন্নতমানের চিকিৎসা বের হয়েছে। আগে ইন্সুলিন দেওয়ার পদ্ধতি ছিল বড় সুচের মাধ্যমে, বর্তমানে তা নতুন পদ্ধতির ইনজেক্শন কলম বা পেনফিলের সাহায্যে দেয়া সম্ভব হচ্ছে, যা কার্যতঃ ব্যথামুক্ত। তাছাড়া ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরো কিছু নতুন সহজ পদ্ধতির ইনজেক্শন বের হয়েছে। যা সপ্তাহে ১ বার দিলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হতে পারে।
৩) রক্তচাপ কত হলে নিয়ন্ত্রিত : Systolic < 120 mm of Hg
Diastolic <80 mm of Hg
৪। কোলেস্টরল (Lipid profile) কত হলে নিয়ন্ত্রিত : TC <200 mg/dl
HDL >35mg/dl
LDL <100 mg/dl
TG
লেখক: অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজী বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজী বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%a1%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b8-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%b8-%e0%a6%95%e0%a7%80-%e0%a6%95/
0 Comments