বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ: স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!

সাইফুল ইসলাম। 

স্ট্রোক কি?

#স্ট্রোক:মাথা/ব্রেইন এর নির্দিষ্ট টিস্যু নষ্ট হওয়ায় ব্রেইন কাজ ব্যাহত হয়।দুটি উপায় হয়:-
১.শিরাতে রক্ত জমাট বাঁধায় নির্দিষ্ট এরিয়াতে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়(৮৫%হয়)।কারন:- শিরাতে ফ্যাট জমা হয়ে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রমবাস হয়, এম্বোলাস হয়।

২.ব্লাড ভেসেল ছিড়ে যাওয়ায়।(১৫%হয়।) কারণ:-দুর্বল ব্লাড ভেসেল ছিড়ে যায় এনিউরিজম , এট্রিওভেনাস মালফর্মেশন এর জন্য।

#ট্রানজিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক/আমরা যেটাকে মিনিস্ট্রোক বলি:-এক্ষেত্রে রোগী 24 ঘন্টার মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। এটাকে সতর্কতা স্ট্রোকের জন্য বলা হয় যেটা পরবর্তীতে গুরুতর স্ট্রোক হতে পারে।

# কাদের ঝুঁকি বেশি বা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:-
[ পরিবর্তন করা যায় না এমন]
® বয়স্কদের
® পুরুষের ঝুঁকি বেশি নারীদের থেকে।
® মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।
© পূর্বে স্ট্রোক করেছে এমন ব্যক্তি।
® বাবা-মা বা বংশগত স্ট্রোক করার প্রবণতা যাদের বেশি।
[পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়]

® যাদের রক্তচাপ বেশি।
® ডায়াবেটিস রুগী।
® যাদের কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেশি।
® যারা সিগারেট খায়।
® যারা বেশি বেশি পরিমাণে মদ খায়।
® যাদের হার্টের সমস্যা আছে।
® যেসব মহিলারা পিল খায়।

কিভাবে বুঝব স্ট্রোক করছে?? এর পর করণীয় কি??

#FAST

F:- facial weakness/হাসতে বললে মুখ বেঁকে যাবে।
A:-arm weakness/বাহু জাগাতে বললে আক্রান্ত পাশের বাহু জাগাতে দূর্বল লাগবে অথবা পারবে না।
S:- slurred speech/কথা আটকে আটকে পড়বে অথবা বলতে পারবে না.
T:- time/সময়। খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

# স্ট্রোক এর চিকিৎসা :-
®যত্ন নেওয়া এবং অন্যান্য সিম্পটম অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া।
® উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা থাকলে সেগুলো চিকিৎসা করতে হবে।
® ফার্মাকোথেরাপি:- চিকিৎসক স্ট্রোক এর ধরন অনুযায়ী দিয়ে থাকেন।
® ফিজিওথেরাপি
® সার্জারি।

#স্ট্রোক হওয়ার পরে কি কি সমস্যা হয়??

#জটিলতা:-
® চিন্তা এবং বিষন্নতা
® একপাশ প্যারালাইজড হয় ।
® ফ্রোজেন শোল্ডার/কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া.
® প্রেসার সোর/চামড়ায় ঘা হয়ে যায়.
® ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়।
® গভীর শিরা রক্তনালীতে রক্ত ​​জমাট বাঁধা.
® কোষ্ঠকাঠিন্য.

স্ট্রোক হওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা এরপরে কিভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায়??

#পূনর্বাসন:-

১. ফিজিওথেরাপি:-রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার পর পূনর্বাসন এর জন্য একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে রোগীকে রেফার্ড করা যেটা পূনর্বাসন এর একটি অংশ। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগের বর্তমান অবস্থা অ্যাসেসমেন্ট করে চিকিৎসার প্লান নির্ধারণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকবেন।। মাংসপেশির শক্তি বাড়াবেন, জয়েন্ট এর রেঞ্জ তথা মুভমেন্ট বাড়াবেন,স্পাস্টিসিটি কমাবে বিভিন্ন এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে , ব্যালেন্স এবং কো অর্ডিনেশন ট্রেনিং দিবেন, এছাড়া অন্যান্য সমস্যা গুলো চিকিৎসা দিবেন।

২. স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি:-কথা বলতে সমস্যা হলে স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি নিতে হবে।

[রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রিহ্যাবিলিটেশন এর জন্য গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট না থাকায় যথাযথ রিহ্যাবিলিটেশন পাচ্ছে না অনতিবিলম্বে সরকারি হাসপাতালগুলোতে গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ এবং 2009 সালে ভিত্তিস্থাপন কৃত বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিওঠেরাপি খুব দ্রুত নির্মাণের
মাধ্যমে রিহ্যাবিলিটেশন খাতকে শক্তিশালী করার জোর দাবি জানাচ্ছি । বর্তমান পরিস্থিতিতে রিহ্যাবিলিটেশন এর জন্য সিআরপি, এবং ন্যূনতম গ্রাজুয়েটদের দ্বারা পরিচালিত ফিজিওথেরাপি সেন্টার, বেসরকারি কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ক্লিনিকে গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছ থেকে যথাযথ ফিজিওথেরাপি নিতে পারবেন।]

রোগীর যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে 30 থেকে 40 শতাংশ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায় তারা তাদের কাজে ফিরে যেতে পারেন, 30% ডিজেবল হয় তাদেরকে কর্মক্ষম থাকার জন্য ফিজিওথেরাপি দরকার ,20% মারা যায়।

স্ট্রোক কি প্রতিরোধ করা যায়???

#হ্যাঁ- 80% স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে। যথা:-
১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।
২. সিগারেট খাওয়া বন্ধ করার মাধ্যমে।
৩. সোডিয়াম কম খাওয়ার মাধ্যমে।
৪. কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে।
৫. ওজন বেশি থাকলে ওজন কমানোর মাধ্যমে।
৬. নিয়মিত এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এই হাসপাতালগুলোতে 20 শতাংশ রোগী স্ট্রোকের। জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল এখানের প্রায় 80 শতাংশ রোগী স্ট্রোকের এ থেকে বোঝা যায় আমাদের সমাজে স্ট্রোক এর প্রবণতা অনেক বেশি।WHO এর 2014 সালের সর্বশেষ ডাটা পাবলিশ অনুযায়ী স্ট্রোক এর কারণে মৃত্যু বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর 6.72 শতাংশ। স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুবরণ চতুর্থ কারণ বাংলাদেশে। স্ট্রোককৃত 1000 রোগীর ভিতরে 485 জন ডিজেবিলিটি হয়। যেটা আমাদের অর্থনীতিতে বড় ইম্প্যাক্ট ফেলে। প্রাইমারি স্ট্রোক প্রিভেনশন এর জন্য দুইটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ব্রাক এবং সিআরপি কাজ করে যাচ্ছে।। সরকারি ভাবে এ ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত ডিজেবিলিটি কমানো এবং স্ট্রোক কমানোর জন্য।

Writer:  Physiotherapy student (National Institute of Traumatology & Orthopaedic Rehabilitation)



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%b8-%e0%a6%86%e0%a6%9c-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f/

0 Comments