জিহাদুল ইসলাম আনসারী: (ধামরাই ঢাকা প্রতিনিধি)
করোনা পরিস্থিতিতে নিজের সুরক্ষা বা আশপাশের মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে বাড়িতে থাকছেন অনেকে। কাউকে কাউকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। এ সময় অনেকের অস্থির লাগতে পারে, অবসাদ ভর করতে পারে। তাই এই সময়ে মানসিক সুস্থ থাকার সহজ পরামর্শ দিয়েছেন টাংগাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ জাকারীয়া আল আজিজ।
কভিড-১৯, ডিসেম্বর ২০১৯ সনে শুরু হয়ে সল্পতম সময়ে বিশ্ব মহামারী আকার ধারণ করেছে এই মারাত্মক এ রোগটি । নিত্য দিন বর্ধিত নতুন নতুন রোগীর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা ।
সম্মুখ সারির যোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয়ঙ্কর ভীতি কাজ করছে বিশ্বজুড়ে ।কোভিড ১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব মানুষের জন্য মানসিক চাপের কারণ হতে পারে । এ রোগ সম্পর্কে ভয় এবং উদ্বেগ অপ্রতিরোধ্য হতে পারে ।এই সংকটময় মুহূর্তে প্রত্যেকই আলাদা ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন।
সংকটকালীন এই সময়ে যারা দৃশত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে
• প্রবীণ ব্যক্তি
• শিশু ও কিশোর
• যাদের দীর্ঘ স্হায়ী রোগ রয়েছে তারা
• কোভিড পজিটিভ রোগী দের সহায়তাকারী
• যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যা রয়েছে।
• বিশ্বব্যাপী সম্মুখ যোদ্ধাদের (যেমন ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী গণ) মাঝে নৈতিক আঘাত (Moral Injury)জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এই Moral Injury থেকে পরবর্তীতে অনেকেই Acute Stress Disorder(ASD) অথবা Post Traumatic Stress Disorder এ ভুগতে পারেন।
The Lancet(Psychiatry)medical journal এ একটি study report প্রকাশিত হয়েছে ।
সেখানে দেখা যায় :
• Depression ৫০.৭%
• Anxiety ৪৪.৭%
• Insomnia ৩৬.১%
• Stress related symptoms ৭৩.৬%
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি এই সময়ে নানাবিধ রোগের চিকিত্সার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও গুরুত্বপূর্ণ ।
কিভাবে বুঝবেন আপনি মানসিক চাপে আছন?
নিচের উপসর্গ ও লক্ষণ সমূহ থাকলে:
অ) আচরণ গত সমস্যা:
১। অতিরিক্ত চিন্তা করা
২। সহজেই ক্লান্ত হওয়া
৩।খিটখিটে মেজাজ ,অতিরিক্ত রাগ ও বেশি বেশি বিতর্ক করা
৪।ঘুমের ব্যাঘাত
৫।নেশাজাত দ্রব্যের (যেমন তামাক, আলকোহল ইত্যাদি) ব্যবহার বৃদ্ধি
৬।একা একা থাকতে চাওয়া
৭।সব কিছুর জন্য অন্য কে দোষ দেওয়া
৮।সহায়তা প্রদান বা গ্রহণ করতে সমস্যা
৯।আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
১০।ক্ষুধা মন্দা বা ক্ষুধা বৃদ্ধি
১১।অনিয়ন্ত্রিত আবেগ
১২।আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া ।
শারীরিক পরিবর্তন:
১।মাথা ব্যথা বা শরীরের অন্য কোথাও ব্যথা
২। পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া
৩।অতিরিক্ত ঘাম বা শীত অনুভব করা
৪।কাঁপুনি হওয়া বা পেশিতে টান লাগা
৫। সহজে চমকে উঠা
পরিবর্তিত আবেগঃ
১।অবসন্নতা
২।উদ্বিগ্নতা
৩। ভীত হওয়া
৪।নিজেকে দোষী মনে করা
৫।রাগান্বিত হওয়া
৬।অদম্য ,উচ্ছ্বসিত বা বীরত্ব পূর্ণ মনে হওয়া ।
৭।অযত্নশীল হওয়া
৮।দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়া
স্মরণ শক্তির পরিবর্তন
১।মনে রাখতে সমস্যা
২। বিভ্রান্ত হওয়া ।
৩।সিদ্ধান্তহীনতা
৪।মনোনিবেশ করতে না পারা।
এই উপসর্গ বা লক্ষণ গুলি যে কারো দেখা দিতে পারে । তবে দুই সপ্তাহের বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
আপনারা যারা আগে থেকেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, তারা পূর্বের ওষুধ গুলি নিয়মিত খাবেন।
নতুন কোন উপসর্গ দেখা দিলে আপনার পূর্বের ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
• মানসিক চাপ নিরাময়ের উপায় সমূহ জেনে নিন
১)নিয়মিত ব্যায়াম করুন :
আপনি বাড়ির আঙিনায়, ছাদে অথবা ঘরেই খালি হাতে ব্যায়াম করতে পারেন ।ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম ও করতে পারেন।
ঘরে বসে সাধারণ অনুশীলনের নিয়ম গুলির জন্য ইউ টিউব ভিডিওর সাহায্য নিতে পারেন ।
২) বিরতি নিন:
নিরবচ্ছিন্ন নেতিবাচক সংবাদ গুলি ক্ষতিকর হতে পারে ।শুধু মাত্র আপনার প্রয়োজনীয় সংবাদ টুকু দেখুন ।
করোনা সম্পর্কিত সংবাদ পরিহার করে, বই পড়ুন, ধাঁধা খেলুন ।মহামারী সম্পর্কে বারবার শুনলে মন খারাপ হতে পারে ।
৩)অন্যদের সাথে সংযুক্ত থাকুন:অনিশ্চয়তা বা ভয়ের এই সময়ে, অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা অপরিহার্য ।বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে মনে অযাচিত ভয়,দুশ্চিন্তা ও হতাশা ভর করবে ।
মোবাইল ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করুন ।আপনার উদ্বেগ ও ভয় সম্পর্কে কথা বলুন ।
৪) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
সময় মত ঘুমাতে যান ।পরের দিনের জন্য পরিকল্পনা করুন । ঘুমোনোর পূর্বে নিকোটিন জাতীয় উদ্দীপক যেমন চা,সিগারেট এড়িয়ে চলুন ।
৫) পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
৬)স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন:
প্রচারিত সতর্কতা অনুসরণ করুন
৭)নিজেকে প্রকাশ করার উপায় গুলি সন্ধান করুন:যেমন ডায়েরি লিখা,ছবি আঁকা, ব্লগিংকরা।
৮)সংগঠিত হউন: অগোছালো কাজ গুলি গুছিয়ে ফেলুন ।এটা আপনাকে কৃতিত্বের অনুভূতি দিবে।
৯) যতটুকু পারুন অন্য কে সাহায্য করুন ।
১০) পরানোয়া থেকে বিরত থাকুন । পরানোয়া হলো এমন একটি মানসিক ব্যধি, মিথ্যে মিথ্যে নিজেকে রোগী মনে করা।
১১। নিজেকে বিনোদনে ব্যস্ত রাখুন ।
যেমন নতুন বই পড়ুন, উৎসাহ এবং হাস্যকর টেলিভিশন শো দেখুন
নতুন রেসিপি করে দেখুনঃ
বন্ধুদের সাথে ভার্চুয়াল বুক ক্লাব শুরু করুন ।
• ভয় নয়,নিজেকে প্রস্তুত করুন ।
• আপনার প্রিয়জন কে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করুন ।
• আপনার নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন ।
লেখকঃ ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ডাঃ মোহাম্মদ জাকারীয়া আল আজিজ এমবিবিএস, এমডি (ইন্টারনাল মেডিসিন),ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ।
বিসিএস (স্বাস্থ্য),এমএসিপি (আমেরিকা)
সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ ।
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল টাংগাইল ।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a7%8d/
0 Comments