হোয়াট অ্যা মেন্টালিটি? – রশীদ জামীল

রশীদ জামীল:

মাটির টানে দেশে ছুটে গেছে একজন মানুষ; মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়াবে বলে। উচিত ছিল মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া। সহায়তা করতে না পারলে অন্তত দূরে থেকে ধন্যবাদ দেওয়া। উলটো পেছনে লেগে স্বভাবজাত মানসিকতা জানান দেওয়ার এটাই বুঝি উপযুক্ত সময় ছিল? এই সময়েও এমন করলে কপালের দুর্গতি দূর হবে কীভাবে?

নিউইয়র্ক বাঙালি কমিউনিটির হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া একটি নাম Dr Ferdous। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিশেবে কাজ করেন নিউইয়র্ক’র মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। বসেন বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে।

করোনার কঠিন সময়ে অনেক ডাক্তার যখন প্রাণের মায়ায় চেম্বার-চুম্বার গুটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন, তখন ডাক্তার ফেরদৌস দিনরাত কাজ করেছেন অসুস্থ মানুষের জন্য। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রুগি দেখেছেন। অনলাইনে নিয়মিত স্বাস্হ্য টিপস দিয়েছেন।

তিনি নিউইয়র্কের অনেক পরিবারে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়েছেন। একই সময়ে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ১৫ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক ছাড়াও পুলিশ ও সেনাবহিনীর সদস্যদের জন্যে কয়েকহাজার মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস পাঠিয়েছেন।

আমেরিকায় কোভিড-১৯ এর অবস্থা অনেক বেটার হওয়ার পর মাতৃভূমির মানুষের টানে ছুটে গেছেন দেশে। তিন মাসের প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতায় দেশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদে বিশেষ ফ্লাইট নিয়ে ছুটে গেছেন বাংলাদেশে। নিবেদিত করেছেন নিজেকে। জানিয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার ইচ্ছার কথা। কাজও শুরু করেছেন সেভাবে। উচিত ছিল মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো। উল্টো শুরু হয়েছে তাকে অপমান করা! কীভাবে হবে!


ডা ফেরদৌসের একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরছি। একজন মানুষকে মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিদান বুঝি এভাবে দিতে হয়? তিনি লিখেছেন,

“প্রিয় বাংলাদেশ। দেশে এসেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা নিয়ে সবার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে। তার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতেও আমি পিছপা হইনি। যখন ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে আমি দেশে এসেছি, তখন একদল লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, আমি নাকি খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। আমার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। কুমিল্লায় বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের বাড়ি।

কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য জেলা। কুমিল্লায় বাড়ি হলেই কেউ খুনি মোশতাকের ভাতিজা কিংবা কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হয়ে যায় না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই দুই খুনির সঙ্গে আমার পারিবারিক কিংবা আদর্শিক কোন সম্পর্ক নেই। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি তাদেরকে চরম ঘৃণা করি। ফলে যারা এই খারাপ কথাগুলো ছড়াচ্ছেন, বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার; ভালো কাজে বাধা দেয়া। এটা অন্যায়। আমি তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রমাণের জন্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। যদি মনে করেন আমার সেবা আপনাদের দরকার, তাহলে পাশে থাকুন।”

এটা কেমন মানসিকতা! একজন মানুষ বিপদের সময় নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে এত দূর থেকে ছুটে গেছে- তার জবাব বুঝি এভাবে দিতে হয়?


বাংলাদেশের কিছু মানুষের চোখে স্থায়ীভাবে ছানি পড়ে আছে। ওরা যেদিকে তাকায়, শুধুই যোদ্ধাপরাধী আর খুনিই দেখ। অনেকটা জন্ডিস রুগির মতো অবস্থা আর কি। জন্ডিস রুগি যেদিকে তাকায়, হলুদই দেখে।

ডাক্তার খন্দকার স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। খুনিদের সাথে তাঁর কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। কথাটি কিছু সময়ের জন্য না-হয় ভুলেই গেলাম। ধরে নিলাম তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আত্মীয়। তাই বলে মানুষের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো যাবে না? মানুষ যখন চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছে, সরকারের পক্ষে যখন সীমিত সামর্থ দিয়ে সকলের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার সুযোগ হচ্ছে না, তখন কে কার আত্মীয়- এই প্রশ্ন যারা সামনে নিয়ে আসে, তারা কারা? তারা কী চায়?

ধরেই না-হয় নিলাম তিনি খোন্দকার মুশতাকদের আত্মীয়। কিন্তু আত্মীয়তা তো কোনো অপরাধ নয়। অথচ, খুনি মুশতাকের ক্যাবিনেট সদস্যদেরও আমরা শেখ হাসিনার আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে দেখি। মন্ত্রিসভাতে পর্যন্ত। তখন কারো চেতনাকে চেতে উঠতে দেখা যায় না।


প্রিয় ডাঃ ফেরদৌস!
আপনি মন খারাপ করবেন না। কয়েকজন মানুষের কারণে হাজার মানুষকে বঞ্চিত করে ফিরে আসবেন না আপনি। হাতেগুনা কয়েকজন আপনাকে অপছন্দ করলেও লাখো মানুষ আপনাকে পছন্দ করছে- আশাকরি এটা আপনি জানেন। কে কী বলল অথবা যে যাই বলুক, দেশের বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকুন। লক্ষ মানুষের দোয়া নিয়ে ফিরে আসুন।

প্রিয় ফেরদৌস ভাই!
আপনি নিজেও সুস্থ এবং নিরাপদে থাকুন।এ কটি সুস্থ বাংলাদেশ থেকে আবার নিরাপদে ফিরে আসুন। আপনার নিউইয়র্ক আপনাকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%9f-%e0%a6%85%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%b0%e0%a6%b6/

0 Comments