আনোয়ার হোসেন: ( উত্তরা, ঢাকা প্রতিনিধি)
বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবী আজ স্থবির। নিরবতার চাদরে ঢেকে গেছে বিশ্বচরাচর। চীনের উহান শহর থেকে উৎপন্ন হয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাস। প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে করোণা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর মিছিল। কোলাহলমুখর জীবজগতে নেই চিরচেনা সেই প্রাণের স্পন্দন। আছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ভয়।
আজ বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মনেই শুধু ভয় আর আতঙ্ক বিরাজমান।
২০২০ এর শুরুতেই যখন চীন থেকে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ পাওয়া যায়, তখনই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সকল সহযোগী সংগঠনের প্রতি করোনায় সৃষ্ট বিপর্যয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, সুরক্ষা উপকরণ বিতরণ ও সামর্থ্যহীন মানুষদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষ নির্দেশনা জারি করেন। তারই আলোকে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন জানুয়ারী মাসেই সচেতনতা লিফলেট প্রচার কার্যক্রম শুরু করে।
তারপর ০৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার পর ১৯ মার্চ ২০২০ইং তারিখে কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি মিটিং-এর সিদ্ধান্তানুযায়ী সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল সাক্ষরিত এক জরুরি নির্দেশনায় নিয়মতান্ত্রিক দৃশ্যমান সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ও দেশব্যাপী জরুরি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সে অনুযায়ী গত ২০ মার্চ থেকে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সারাদেশে সচেতনতামূলক লিফলেট, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাসজিদভিত্তিক হ্যান্ডওয়াস ও সাবান বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বিপদ থেকে মুক্তিলাভের জন্য সর্বস্তরের জনশক্তিকে নিয়ে রোজা পালন এবং খতমে শিফা পড়া হয়। দিন যতো যায়, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ততো বাড়তে থাকে। একে একে বিভিন্ন এলাকা লকডাউনের আওতায় আসতে থাকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিল, ইন্ড্রাস্ট্রি ও কলকারখানাও বন্ধের ঘোষণা আসতে শুরু করে। জনমনে বাড়তে থাকে আতঙ্ক। সবসময়ের শহরমুখী মানুষগুলোও অজানা আশঙ্কা থেকে শহর ত্যাগ করে গ্রামের পথে ছোটে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে। সবধরণের প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে যায়। সীমিত হয়ে যায় যানচলাচল। ফার্মেসী ও মুদি দোকানসহ জরুরি দোকানপাট ছাড়া সবকিছুই বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়। এতে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী, ফুটপাতের বিক্রেতা, হকার, রিক্সা ও ভ্যানচালক, গৃহপরিচারিকা, বাসের হেল্পার প্রইভেট প্রতিষ্ঠানে কম বেতনের চাকুরে; এমন স্বল্প পুঁজির মানুষ- যারা দিন এনে দিন খায়, তারা পড়ে যায় নিদারুণ বিপদে। সেই সাথে মাদরাসাগুলোও বন্ধ হয়ে গেলে কওমি শিক্ষকরাও পড়ে যান বিপাকে। সবার কথা চিন্তা করেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বিশেষ ভিডিও বার্তায় কম সামর্থবান মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেন। সাথে সাথে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সকল সহযোগী সংগঠন সারা দেশজুড়ে একযোগে অভাবী পরিবার, কর্মচ্যুত ব্যক্তি, উপার্জন অক্ষম মানুষ, অসুস্থ, দিনমজুর, বেকার যুবক, অসহায় বিধবা, উপজাতি, দরিদ্র অমুসলিম ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। যা এখনো চলমান।
করোনার প্রভাব পড়েছে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপরও। কোথাও ডাক্তার সংকট, কোথাও সংকট ছিল স্বাস্থ্যকর্মীর। সরকারী ফরমানের ভয়ে খোলা রাখলেও কোন কোন হাসপাতালে রোগীদের সাথে করা হয়েছে চরম দুর্ব্যবহার। এমতাবস্থায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের টিম গঠন করে বিভাগ ও জেলাভিত্তিক ফোন কলে চিকিৎসা সেবাদানের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সময় গড়িয়ে মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল শুরু হয়। ততদিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় বহুগুণে। ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের ভাগ্যাকাশজুড়ে শুধুই দুর্যোগের ঘনঘটা বাড়তে থাকে। সরকার সর্বক্ষেত্রে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও গার্মেন্টস মালিকরা অবিবেচনাপ্রসূত গার্মেন্টসগুলো খোলা রাখে। পোষাকশ্রমিকরা পড়ে যায় বিপদে। বিপদ মাথায় নিয়ে কাজে যাওয়ার পর কোন কোন বাড়ির মালিক তাদের বাড়ি ত্যাগে বাধ্য করে। অপরদিকে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল ও টিসিবির তেল গোগ্রাসে গিলে নেয় কিছু জনপ্রতিনিধি নামিয় লুটেরা। এমতাবস্থায় দারিদ্রের কষাঘাতে পিষ্ট নিরীহ মানুষগুলো কাজ ও খাবারের খোঁজে রাস্তায় বেরুলে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করে প্রশাসনের কতিপয় সদস্য। ঘটে যাওয়া সকল অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধেই জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
সময় পেরিয়ে আসে রমজান। এই রমজানেও থেমে যায়নি সহায়তা তৎপরতা। শুরু হয় কম সামর্থ্যবান পরিবারগুলোর মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ। রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে কেন্দ্রীয় কমিটির তত্ত্বাবধানে ইফতার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়ে সারা দেশে ইউনিয়ন-ওয়ার্ডভিত্তিক ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল রোধ ও দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া কমিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
দেশব্যাপী লকডাউনে সারাদেশের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শ্রমিকের অভাবে হতাশায় ভুগছিলেন তারা। অপরদিকে একশ্রেণির সরকারি আমলারা কোথাও কাঁচা ধান কেটে আবার কোথাও ছবি তুলতে গিয়ে ফসল নষ্ট করে কৃষকের সাথে উপহাসে মেতে উঠেছিলো। এমতাবস্থায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সর্বস্তরের জনশক্তিকে নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কৃষকের পাকা ধান, তরমুজ ও শস্য-ফসল কেটে বাড়ি পৌঁছে দিতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে পরবর্তি বিশ্বপরিস্থিতি পর্যালোচা করে সবজি ও শস্যের বীজ বিতরণ কর্মসূচিও পালন করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%a4%e0%a7%8e%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc/
0 Comments