শেখ ফজলুল করিম মারুফ
কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান জগতের নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমাদের হাতে। শুধু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানই নয় বরং সামাজিক বিজ্ঞানের নিয়ন্ত্রণও পুরোমাত্রায় তাদের হাতে। সমাজের জন্য কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর সংজ্ঞা কি হবে, সেগুলোর পরিমাপক কি হবে তাও তারা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
সত্ত্বাগতভাবেই পশ্চিমা সভ্যতার সাথে ইসলামী সভ্যতার প্রচন্ড রকম বৈপরীত্য আছে। সেটা যেমন ইব্রাহিমীয় দুইটি ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তেমনি তা ক্রুসেড সম্পৃক্ত সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং একই সাথে চিন্তার ভিত্তির ভিন্নতা।
ইসলামকে তাই সর্বদাই পশ্চিমের সাথে বোঝাপড়া করেই পথ চলতে হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মুবাহালা করতে হয়েছিলো। বর্তমানেও পশ্চিমের সাথে বোঝাপড়া করা ছাড়া ইসলামপন্থীদের সামনে পথ চলার কোন সুযোগ নাই। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ অর্থে পশ্চিমায়িত। পশ্চিমা জ্ঞানের বাইরে কোন জ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত না। পশ্চিমা জ্ঞান, পশ্চিমা চিন্তা কাঠামো ও চিন্তাভিত্তিই তাদের কাছে একমাত্র গ্রহণীয়। এমনকি ইসলামের জ্ঞানও পশ্চিমের অনুমোদন ছাড়া এদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। এমতাবস্থায় পশ্চিমের সাথে বোঝাপড়া করা ছাড়া কোন বিকল্প নাই।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে ইশা ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র শিবির ও হিজবুত তাহরীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কাজ করে। এর মধ্যে যতটুকু দেখেছি তাতে তাহরীর পশ্চিমকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করার নীতিতে চলে। শিবির ও ইশা নীতিগত পশ্চিমের সাথে বোঝাপড়া করার নীতিতে পথ চলে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, তাদের কারোরই পশ্চিমের সাথে প্রাথমিক বোঝাপড়া করার মতো জ্ঞানগত উপকরণ নাই। এর অন্যতম কারণ হলো, এদের চিন্তার শেকড় ইখওয়ানের সাথে সম্পৃক্ত। ইখওয়ানী চিন্তায় পশ্চিমকে প্রত্যাখ্যান করেই তাকে মোকাবিলা করার কৌশল নেয়া হয়েছে। ফলে কোন প্রশ্ন সামনে আসলে সেটা পশ্চিমা চিন্তা থেকে সৃষ্ট বলেই তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু এখন সেই কৌশল আর কার্যকর না। এই কৌশল পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিতদের নাস্তিক্যবাদের দিকে ঠেলে দেবে।
ফলে এখন নারীবাদ, নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার, জিজিয়া, ধর্মত্যাগ, কিসাস, পর্দা, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি ইস্যুগুলোর সাথে বোঝাপড়া খুব জরুরী। এই বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ওদের চিন্তাকাঠামো, চিন্তাভিত্তি ও চিন্তাধারা বিবেচনায় রাখতে হবে। এবং সেগুলোর আলোকে বা সেগুলোকে অযৌক্তিক প্রমাণ করা ছাড়া কেবল একপক্ষীয় কোরআন-হাদিস দিয়ে বোঝাপড়া করলে তাদেরকে প্রভাবিত করা যাবে না।
এরজন্য দরকার একদল মানুষ। যারা বহুমাত্রিক ইসলামী জ্ঞানে ইজতেহাদ করার যোগ্যতা রাখেন একই সাথে পশ্চিমের জ্ঞানজগতে দখল রাখেন। যিনি বাস্তবতাকে অভিজ্ঞতার আলোকে জানেন এবং মেজাজে শরীয়াহ ধারন করেন। এর কোন একটা কমতি হলে হয় সে ইসলামকে বিকৃত করে ফেলবে অথবা প্রজন্মকে নাস্তিকতার দিকে ঠেলে দেবে।
বাংলাদেশে ইসলামী জ্ঞানের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান কওমী মাদ্রাসাগুলোকে এবং ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এখনি এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তা নাহলে মহাবিপদ সামনে অপেক্ষা করছে। বিপদের মাত্রা বুঝতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইসলাম নিয়ে কাজ করে এমন কারো সাথে কথা বলতে পারেন। নামাজী, রোজাদার ছেলে-মেয়েগুলোও বৌদ্ধিকভাবে নাস্তিক হয়ে বসে আছে। যাত্রীরা হুশিয়ার!!!
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%aa%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a5%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%8b%e0%a6%9d%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%9c%e0%a6%be/
0 Comments