ট্যাবু ভাঙার নামে নগ্নতার প্রচার বন্ধ করুন

মনসুরুল আলম মনসুর

বিবাহিত নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক ধর্ম ও সমাজ স্বীকৃত বিষয়। প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই জানে স্বামী-স্ত্রী একান্তে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে থাকেন। তাই বলে এরকম দাবি করা উচিৎ নয়- “যেহেতু এটা সকলেরই জানা কথা, তাহলে এতো লুকোচুরি করার কী আছে? সবার সামনে মিলিত হতে কী সমস্যা?”

প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মানুষকে বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। বাথরুমে গিয়ে মানুষ কি কি করে ইহাও সকলের জানা বিষয়। কিন্তু কেউ বলে না, “যেহেতু এটা জানা বিষয়, তাহলে আড়াল করার কী দরকার? দরজা খোলা রেখেই কাজ সমাধান করলেই হলো!”

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। সেই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে মানুষের প্রাকৃতিক কাজকর্মও পশু-পাখির মতো নগ্ন-উন্মুক্ত নয়। মানুষকে মানুষ হিসেবে অনেক হালাল এবং স্বীকৃত কাজ একান্তে সারতে হয়। কোন বিবেকবান মানুষ নির্বোধ পশুর মতো যখন-তখন, যেখানে সেখানে যা খুশি করতে পারেন না।

ছেলে-মেয়েরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তাদের শারীরিক-মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন নতুন কোন বিষয় নয়। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই এর ধারাবাহিকতা চলে আসছে। ইহা এরকম কোন বিষয় নয় যে, গত কয়েকবছর থেকে এই পরিবর্তন মানব সভ্যতায় যুক্ত হয়েছে।

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে কিশোর-কিশোরীরা প্রাথমিক অবস্থায় অজ্ঞাত-অপ্রস্তুত থাকে বলে অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কি করতে হয় বুঝে উঠতে পারে না। এই না জানা ও অজ্ঞতার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে কাউকে অপ্রত্যাশিত বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।

আবার পারিপার্শ্বিক প্রভাবে অনেকেই আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে। অবশ্য এই জানা ও প্রস্তুতি পারিবারিকভাবে হলে বিষয়টির সাথে তারা সহজে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারে।

পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতে হবে, আমাদের দেশে অশিক্ষা-কুশিক্ষা এবং নানাবিধ কুসংস্কারের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যার কারণে অনেক কিশোর-কিশোরীকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

তারপরও আবহমানকাল থেকে এইসব অতি ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা রক্ষা করে একধরনের সামাজিক নিয়মের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এবং চলে আসছে।

অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হলো- সাম্প্রতিক সময়ে এদেশের সুশীল নামধারী একশ্রেণির নির্লজ্জ মানুষ পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে নারী-পুরুষের এই গোপন বাস্তবতাকে উন্মুক্ত করার দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। তারা কোনকিছু আর গোপন রাখতে চান না। তাদের এই প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ট্যাবু ভাঙার লড়াই!

ট্যাবু ভাঙার লড়াইয়ে তারা সকল আদি-গোপনকে উন্মুক্ত ও প্রকাশ্য করতে চান। মেয়ের ঋতুস্রাবের খবর তার বাবাকে জানাতে চান, বোনের গোপন সমস্যা ভাইয়ের কানে পৌঁছে দিতে চান। এমনকি মায়ের গোপন পোশাক ছেলের মাধ্যমে ক্রয় করাতে চান।

তথাকথিত সুশীল ও নারীবাদী সমাজের দাবি হচ্ছে- ট্যাবু ভেঙে এই ব্যাপারগুলো সমাজে উন্মুক্ত হলেই রাষ্ট্রে নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হবে। নারীরা সমাজের বুকে অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে!

কিন্তু চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই বুঝতে পারছেন, সুশীল বেশধারী এসব লম্পটদের মূল উদ্দেশ্য সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়। বরং এরা চায়, সকল গোপনীয়তার বাঁধ ভেঙে এদেশের নারীরা পশ্চিমাদের মতো নির্লজ্জ ও বেহায়া হয়ে যাক।

কথায় আছে, শিয়াল মাত্রই মুরগির স্বাধীনতা চায়। মুরগি স্বাধীন হয়ে দেয়ালের বাহিরে আসলেই শিয়ালের লাভ। বাংলাদেশে নারী স্বাধীনতার নামে মুখস্ত বুলি কপচানো ব্যক্তিদের চরিত্র সম্পর্কে এদেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে।

সুশীল নামধারী এই লম্পটরাই এদেশে সমকামিতার মতো বিকৃত যৌনাচারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায়। এরা নারী স্বাধীনতা নয়, বরং নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। এরাই এদেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে চামড়া ব্যবসার পথিকৃৎ।

এরা একদিকে ট্যাবু ভাঙার সবক দেয়, অপরদিকে এরাই দেহসর্বস্ব নারীদেরকে নগ্ন পোশাকে সাজিয়ে দর্শকদের ও নিজেদের চোখের কামনা পূরণ করে। নারী জাতির অন্যান্য অগণিত সমস্যা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নাই। তাদের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র দৈহিক স্বাধীনতাই নারী স্বাধীনতা।

এই দেশে এখনো সমাজে নারীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসার অভাবে গর্ভবতী মায়েরা মারা যাচ্ছেন। এগুলো নিয়ে তাদের কোন বিকার নেই।

ভাবতে লজ্জা হয়, প্রথম সারির একটি পত্রিকা দিনের পর দিন কীভাবে এসব বিষয় তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট লোকদের কি নূন্যতম লজ্জা-শরম নেই?

সম্মানিত ব্যবসায়ী ভাইয়েরা, আপনারা স্বীকার না করলেও মানুষ খুব ভালো করেই জানে, স্যানিটারি ন্যাপকিনের মার্কেট বিস্তারের জন্যই আপনাদের এইসব নোংরামি! ব্যবসা করবেন ভালো কথা, তাই বলে এতোটা নিচে নামতে হবে?

লিখেছেন : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%81-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a6%be/

0 Comments