ফয়জুল করীম: আমার বাবাকে নিয়ে যতটা বলা যায়, কম হয়ে যায়। জানি না, বাবা আমার এই লেখাটা পড়বেন কিনা। কিংবা পড়লেও ঠিক কি অনুভূতি হবে তার। সে যা হোক, এটুকু বলতে পারি আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বাবা। বড় বড় মানুষেরা বলে গেছেন, পৃথিবীতে খারাপ মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু খারাপ বাবা একটিও নেই। বাবারা বোধ করি এমনি হন—সেলফলেস, সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে রাখা। বাবা শব্দটা যতটা সহজ মনে হয় ঠিক ততখানি সহজ না, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ বহন করে। বাবা যেন ছায়া দানকারী বিশাল মহিরুহের স্বরূপ। নিজের কথা ভাবার আগে পরিবারের সবার কথা ভাবেন।
পাড়া গ্রামে বেড়ে উঠে খুব বেশি লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও জানার দিক থেকে তাঁর কোনো কমতি নেই। জগতের হেন কোনো বিষয় নেই তাঁর অজানা। আমাদের ভাইবোনকে সব সময় সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। হয়তো কখনো কখনো খুব কঠোর বলে মনে হতো, কিন্তু ভেতরটা তার খুবই নরম। সারাটা জীবন কষ্টেসৃষ্টে কাটিয়ে কেবল আমাদের সুখ সুবিধার কথা ভেবেছেন। জীবনের সর্বাধিক অংশ কাটিয়েছেন প্রবাসে ৷ দাদুদের থেকে শুনছি যখন আমার আব্বুর ২০ সম বয়স তখন দাদা দুনিয়া ত্যাগ করেন ৷ আর সংসারের ঢাল হয়ে যান বাবা ৷ এখনও কাটাচ্ছেন ৷ ঈদ-রমজানে বাড়ি আসার সৌভাগ্য হয়না তার ৷ পরিবারের নিজের ওষুধ না কিনে ৫-১০ টাকা বাঁচিয়ে আমাদের প্রয়োজনে খরচ করেছেন। তাতে তাঁর চরম প্রশান্তি। লেখাপড়া সংক্রান্ত যেকোনো কাজে, কী বই কেনা, কী পরীক্ষার ফিস দিতে কখনোই কার্পণ্য করতে দেখিনি তাঁকে। স্বল্প আয়ের চাকরিতে সৎ থেকে সংসার খরচ চালাতে বেশ হিমশিম খেয়ে যেত হয় তাঁকে। তার প্রকাশ কখনো আমাদের সামনে করতে দেখিনি। পরনের পাঞ্জাবীটা হয়তো পাতলা হতে হতে ছিন্নপ্রায়, কিন্তু নতুন একটা কেনার কথা ভাববেন না, বলবেন হয়তো সামনের বছর। আমাদের আবদার এই ঈদে কিন্তু দুটো জামা চাই-ই চাই। সে আবদারও সময়মতো মিটানো হয়। মায়ের শাড়িটা কিংবা আমাদের জামাটা, ভালো খাবারটা এসবের কখনো অভাব হয় না।
এত বছরে দেখলাম না, তিনি ভালো কিছু খেতে চেয়েছেন। বাড়ি এলে খেতে বসে বড় মাছের পেটিটা কিংবা মুরগির রানটা আমাদের পাতে নির্দ্বিধায় তুলে দিতেন। বাবার মায়ের প্রতি সব সময় খুব বাড়তি যত্ন। কখনো উঁচু গলায় কথা বলেন না তার সঙ্গে কিংবা কখনো গায়ে হাত তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি বোধ হয়। বাবার গুণের ছিটেফোঁটাও যদি আমরা পেতাম! অল্পতেই অধৈর্য হই আমরা, কোনো কিছু চাওয়ার আগেই যেন আমাদের পাওয়া চাই। অথচ পৃথিবীটা এত সহজ জায়গা না, প্রতি মুহূর্ত অনিশ্চয়তায় ভরা। আমাদের মন যেন অতশত বুঝতেই চায় না।
আমাদের অসুখ করলে, জ্বর হলে বারবার খবর নেন আর বাড়ি থাকলেতো এসে কপালে হাত দিয়ে দেখবেন। সারা রাত পাশে থেকে হয়তো মাথায় জলপট্টি পাল্টাতে থাকবেন, যদি এতে করে কিছুটা ভালো লাগে আমাদের। আমরা সবাই প্রচণ্ড শাসনের মধ্যে বড় হয়েছি। নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই মার একটাও মাটিতে পড়ত না। বড় হওয়ার পর এখন বুঝি এ সব কিছুরই প্রয়োজন ছিল।
বড় সন্তান হিসেবে আমি সবচেয়ে বেশি আদর পেতাম ৷ প্রবাস থেকে আসার সময় আমাস জন্যই চকলেট আনা হতো কিংবা সুন্দর জামাটা হয়তো আমার জন্যই কেনা হতো। এখন বড় হয়ে গেছি আগে থেকে তবুও যেনো আমার আবদার গুলো না বলতেই পূরণ হয় যায়।
কিন্তু কখনো বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলা হয়নি, আব্বু তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি! না বললেও মনে হয় বাবারা সব টের পান। আর মুখে বলার থেকে বোধ করি লেখাটাই শ্রেয়। আমি নিজেকে সব সময় ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে, আমি এমন চমৎকার একজন বাবা পেয়েছি। কয়জনের এমন ভাগ্য হয়! সৎ, আদর্শবান, মমতাময় বাবা আমার।
করোনা ভাইরাসের এ সংকটময় সময়ে যখন মানুষ আশ্রয়মুখী এ সময়টায়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি যুদ্ধ করছেন আমাদের জন্য ৷ তিনি লড়ে যাচ্ছেন করোনার সাথে ৷
কিছুদিন ধরে অসুস্থ ৷ তবুও হাল ছাড়ছেন না ৷ আল্লাহর কাছে বাবার সুস্থতার সাথে নেক হায়াত চাচ্ছি ৷
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a7%9f-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a7%b7-%e0%a6%ab%e0%a7%9f%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ae/
0 Comments