মুফতি রবিউল ইসলাম:
মাহে রমযানে ইতিকাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রমযানের ফযিলত ও মর্যাদা লাভের অন্যতম এক মাধ্যম। বিশেষত লাইলাতুল কদরের বরকত ও ফযিলত পাওয়ার জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব আপরিসীম।
রাসুল সা. মাদানী জীবনে মাত্র একটি রমযানে ইতিকাফ করেননি। মূলত জিহাদের ব্যস্ততায় সে বছর ইতিকাফের সুযোগই হয়ে ওঠেনি। এছাড়া কোনো বছরই রাসুল সা. এ মর্যাদাপূর্ণ আমল ছেড়ে দেন নি।
বোখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত,
كان النبي صلى الله عليه و سلم يعتكف فى كل رمضان عشرة أيام فلما كان العام الذى قبض فيه اعتكف عشرين يوما
রাসুল সা. প্রত্যেক রমযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন।তবে ইন্তেকালের বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। -বোখারী : ২০৪৪
অপর বর্ণনায় এসেছে,
إن النبي صلى الله عليه و سلم كان يعتكف فى العشر الأواخر من رمضان
রাসুল সা. রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। -বোখারী : ২০২৫, -মুসলিম : ২৬৭০
ইতিকাফের ফযীলত
রাসুল সা. এরশাদ করেন,
من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله تعالى جعل الله بينه و بين النار ثلاث خنادق أبعد مما بين الخافقين
যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করবে,আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাছে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করবেন।অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যত দূরত্ব আছে,তার চেয়েও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।
শুয়াবুল ইমান : ৩৯৬৫
ইতিকাফের উপকারিতা
* শবে কদর অন্বেষণের অন্যতম মাধ্যম হল ইতিকাফ। যে শবে কদর হাজারো মাস থেকে শ্রেষ্ঠ বলে সরাসরি কোরআনেই এরশাদ হয়েছে।
* ইতিকাফকারী অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও তার দিনরাত ২৪ ঘন্টা ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে।
* ইতিকাফের বদৌলতে অনেক গুনাহ ও দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়া যায়।
* ইতিকাফ আল্লাহর মেহমান হয়ে তার সাথে মুহাব্বাত ও ভালোবাসা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম।
ইতিকাফের কিছু জরুরী মাসায়েল
# রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, কিফায়াহ। মহল্লার কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে। বোখারী : ২০২৫, ফতোয়া শামী : ৩/৪৯৫
# মাসনূন ইতিকাফ যেহেতু শেষ দশ দিন ব্যাপী।তাই প্রথম থেকেই পুরো দশ দিনের নিয়ত করা আবশ্যক। ফতোয়া শামী : ৩/৪৯৪
# ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করা আবশ্যক।
ফতোয়া শামী : ৩/৪৯৫, জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৫২৪
# মাসনূন ইতিকাফ শুরু করলে তা পূর্ণ করা আবশ্যক। ওযর ব্যতীত তা ভাঙ্গা জায়েয নেই। -ফতোয়া শামী : ৩/৫০০
# পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো উভয়ই নাজায়েয। এতে ইতিকাফ আদায় হবেনা।
মসজিদ ফান্ড থেকে পারিশ্রমিক দিলে কর্তৃপক্ষ তার দায়ভার ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বাধ্য।
ফতোয়া শামী : ৯/৯৩, -খয়রুল ফতোয়া
# ইতিকাফ অবস্থায় প্রয়োজনে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কথা বলা জায়েয। তবে পণ্য মসজিদে আনা যাবে না। ফতোয়া শামী : ৩/৫০৬
# প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও অজুর জন্য বের হওয়া জায়েয। -আবু দাউদ : ২৪৭৩
# ফরজ গোসল ও জুমার সুন্নত গোসলের জন্য বের হওয়া জায়েয। -ফতোয়া শামী : ৩/৫০১,
-আহসানুল ফতোয়া ৪/৫০২
# গরমে শরির ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে গোসল করা জায়েয নেই।( অবশ্যএকান্ত যদি গোসল করতে চায়,তাহলে অজু করতে ব্যয় হয় এ পরিমাণ সময়ে গোসল সেরে নেয়ার ব্যাপারে অনেকে অবকাশ দিয়েছেন।) -আহসানুল ফতোয়া ৪/৪৯৭
#মসজিদে থেকে শুধুমাত্র মাথা বের করে পানি দেয়া জায়েয। -সুনানে নাসাঈ : ৩৮৭
# ইতিকাফকারী মসজিদের ছাদে ও মেহরাবে যেতে পারবে। ফতোয়া শামী : ৩/৪৯৩,
ইমদাদুল ফতোয়া ২/১৮২
# বারান্দা যদি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয় ( অর্থাৎ নির্মাণের সময় বারান্দাকেও যদি মসজিদের অংশ মনে করা হয় তাহলে সেখানেও যাওয়া জায়েয। -ফতোয়া শামী : ৩/৪৯৩
# শরয়ী ওজর ছাড়া সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে (ভুলে হলেও) ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। -ফতোয়া শামী ৩/৫০৩
#জানাযার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। আলমগিরী ১/২১২, -আহসানুল ফতোয়া : ৪/৪৯৯
লেখক: প্রধান মুফতি, জামিয়া সিরাজিয়া দারুল ইসলাহ,ঢাকা
source https://deshdunianews.com/%e0%a6%87%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ab-%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b7-%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0/
0 Comments