ভবিষ্যতে এবি পার্টির নাম হতে পারে ভাইরাস পার্টি, বললেন পলাশ রহমান

দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্কঃ ইতালি প্রবাসী, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট পলাশ রহমান তার ফেসবুক পোস্টে সদ্য গঠিত এবি পার্টি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেন ৷ দেশ দুনিয়া নিউজ এর  পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলঃ 

জামায়াতের কিছু দলছুট নেতা নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষনা করেছেন। আমরা বাংলাদেশ পার্টি বা এবি পার্টি নামে তারা নেকাব তুলেছেন। জামায়াত যে নতুন রুপে, নতুন ভাবে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করছে তা বোঝা যাচ্ছিল অনেক দিন থেকে। এর মধ্যে তাদের নয়া আগমণ নিয়ে বেশ আলোচনা, সমালোচনাও হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতের বড় নেতা ব্যারিষ্টার আঃ রাজ্জাক পদত্যাগের পরে এই আলোচনা বেশি জোরদার হয়। ধারণা করা হচ্ছিল তার নেতৃত্বেই নতুন দলের সূচনা হবে।
প্রশ্ন হলো নতুন দল ঘোষনার জন্য এই সময়টাকে বেছে নেয়া হলো কেনো? বেশ অনেক বছর থেকে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ‘রমজান’ কেন্দ্রীক রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছে। ইফতার পার্টির নামে তারা ধর্মীয় নিয়ম ভেঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকে। এমনকী দেশের বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকেও এই কাতারে সামিল হতে দেখা গেছে। কিন্তু নতুন দল ঘোষনা করার নজির সম্ভবত এটাই প্রথম। এর থেকে বড় বিষয় হলো আমাদের দেশসহ গোটা দুনিয়ায় এখন করোনা যুদ্ধ চলছে। মানুষ জরুরী অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রাজনৈতিক দোকান (বাংলাদেশের বাস্তবতায়) খোলার জন্য কোন বিবেচনায় এই সময়টাকে উপযুক্ত মনে করা হলো?
সরল রেখায় চিন্তা করলে মনে হতে পারে সরকারের বাধা, সমালোচনা, সাংবাদিকদের বাকা প্রশ্ন এড়াতে তারা এই সময়টা বেছে নিয়েছে। আর গরল ভাবে চিন্তা করলে ষড়যন্ত্রের গন্ধ এসে নাকের ডগায় ধাক্কা দিতে পারে। মহামারির মতো দূর্দিনে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দল খোলাকে এক ধরণের ষড়যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। মানুষের দূসময়কে কাজে লাগানো বা সুবিধা ভোগের চেষ্টা হিসাবে ধরা যেতে পারে।

এবি পার্টি বা আমরা বাংলাদেশ পার্টি নামটা আমার ভালো লাগেনি। এই নামের মধ্যে কোনো মাধুর্য নেই। সাম বাংলা-কিছু ইংলিশের মতো খসখসে নাম। তাছাড়া দল ঘোষনার জন্য এই সময়টা বেছে নেয়া কোনো ভাবেই ভালো হয়নি। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যদি হয় জনকল্যাণ করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা তবে তা কোনো যুক্তিতেই দূর্যোগের মধ্য দিয়ে হতে পারে না। বরং জামায়াতের অতীত রাজনীতিতে যারা সব সময় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছে তাদের জন্য বিষয়টা একটু সহজ হয়ে গেলো। তারা এখন অনায়াসে আঙ্গুল তুলে বলতে পারবে- জামায়াতী ষড়যন্ত্রের নয়া সংস্করণ হলো আজকের এবি পার্টি।
তাছাড়া আমাদের দেশে ঝড় বন্যার সময়ে কোনো শিশুর জন্ম হলে ‘বন্যা’ ‘বাদল’ নাম রাখার প্রচলণ আছে। সেই হিসাবে করোনা সংকটের মধ্যে জন্ম নেয়া এবি পার্টিকে যদি দেশের মানুষ ভবিষ্যতে ‘করোনা পার্টি’ বা ‘ভাইরাস পার্টি’ বলে চিহ্নিত করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এসব বাস্তবতা যে দল ঘোষনাকারীরা জানেন না বা বোঝেন না আমার কাছে তা মনে হয় না। তাদেরকে এতটা বোকা ভাবার কোনো কারন নেই। কিন্তু মোটা দাগের প্রশ্ন হলো- তারা কী আদৌ এবি পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন বা প্রতিষ্ঠিত করতে চান? নাকী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানোই মূখ্য উদ্দেশ্য? ঝড় থেমে গেলে কী দেশের মানুষের জন্য ভিন্ন কিছু অপেক্ষা করছে বা নতুন কিছুর জন্য রাস্তা তৈরী করা হচ্ছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে দেশের মানুষকে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দল। তারা যতো চেষ্টা করুক রাজনীতিতে সফল হতে পারবে না। সাময়িক ভাবে লকলক করতে পারে, কিন্তু মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। যার বড় প্রমান জামায়াতের বর্তমান পরিস্থিতি। বিএনপির কাঁধে ভর করে, ইসলামের কথা বলে লকলকিয়ে উঠেছিল সত্যি, কিন্তু একটা দমকা বাতাসে মাঁচা ভেঙ্গে পড়ে গেছে। এখন ধুলা মাটিতে গড়াগড়ি করছে।
জামায়াতের আজকের এই বাস্তবতার কথা আশির দশকে বলেছিলেন ছাত্র শিবিরের ক’জন নেতা। তারা বলেছিলেন, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের সামনে রেখে জামায়াত কোনো দিন সফল হতে পারবে না। তখন শিবির থেকে ওই ছাত্রনেতাদের বহিস্কার করা হয়েছিল। পরে তারা যুব শিবির নামে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়।
এত বছর পরে জামায়াত শিবিরের দলছুট নেতারা নতুন নামে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করলে তা বিশ্বাসযোগ্য করা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারন তারা জামায়াতের সুসময়ে দলছুট হননি। বিপদের সময়ে তাদের উপলব্ধি হয়েছে জামায়াতের স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা ভুল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উপেক্ষা করে রাজনীতি করা ভুল ছিল। জাতীর কাছে ক্ষমা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। জামায়াত নামে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
এসব উপলব্ধি যদি জামায়াতের সুসময়ে হতো তবে দেশের মানুষের কাছে নতুন দলের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সহজ হতো। কিন্তু জামায়াতের সুসময়ে তাদের মধ্যে এসব উপলব্ধি হয়নি, হয়েছে দুসময়ে। সুতরাং দেশের মানুষ যদি এটাকে জামায়াতের নতুন ষড়যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করে এবং আনুকুল্য না দেয় তাতে রাগ করার কিছু থাকবে না।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ad%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae/

0 Comments