অমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসলামের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে

দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক:  রাজনীতি আপনাকে পূর্ণমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে। যতগুলো মাত্রা আপনি কল্পনা করতে পারেন আর যা যা কল্পনাও করতে পারেন না তার সবগুলোতেই রাজনীতি আপনাকে রাষ্ট্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে শুরু করে আপনি কি দেখতে পারবেন বা কি দেখতে পারবেন না, আপনি কি পড়তে পারবেন, কি পড়তে পারবেন না, কি চিন্তা করতে পারবেন, কি বলতে পারবেন, কোথায় যেতে পারবেন, কি করতে পারবেন, কি খাবেন এমনকি স্ত্রীর সাথে কি আচরন করবেন ইত্যাদি সবকিছুই রাষ্ট্রের মাধ্যমে রাজনীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে।

মসজিদের মেহরাবে ইমাম কি বলবেন, মাদ্রাসার হাদিসের দরসে কি বলবেন বা কি বলবেন না তাও নির্ধারণ করে দেয় রাজনীতি। আর এখন আপনি কোথায় সেজদা দিতে পারবেন আর কোথায় সেজদা দিতে পারবেন না তাও রাষ্ট্র নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
রাজনীতির এই ইশ্বর সুলভ ক্ষমতার কথা জেনেই ইসলামপন্থী রাজনৈতিকরা সকল আলেম-উলামাদেরকে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার এবং একটি সফল বিপ্লবে নেতৃত্বে দেয়ার আহবান জানিয়ে আসছে।
কিন্তু আলেম-উলামারা বরাবরই “সিয়াসাত মে হালাকি হ্যায়” জাতীয় কথা বলে রাজনীতি থেকে দুরে থেকে থেকেছে। এবং নিজেদের অঙ্গনে রাজনীতি বিমুখতাকে ফ্যাশন বানিয়ে ফেলেছে। সেজন্যই অনেকেই নরম বালিশে হেলান দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সুন্নতি মুচকি হেসে গর্বভরে বলেন, “আমি কোন রাজনীতি-টিটির সাথে জড়িত না।”

অথচ রাজনীতির যে মুল অর্থ, “উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য পরিকল্পিত প্রচেষ্টা” সেই অর্থে তারাও একেকজন বড় ধরনের রাজনীতিবিদ। তবে শুধুই ব্যক্তি স্বার্থে। মাদ্রাসায় চাকরি পাওয়া, ভালো কিতাব পাওয়া, ভালো রুম পাওয়া, ইহতেমাম বা ইকামতের দায়িত্ব পাওয়া, মসজিদে ইমামতি পাওয়া, সেটাকে টিকিয়ে রাখার কাজে তারা হেন কোন রাজনীতি নাই যা তারা করে না।

কিন্তু যখনই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম ও সংগঠনের কথা আসে তখন তারা “সিয়াসাত মে হালাকত হে”, রাজনীতি করলে “ইলমি একসুয়ি” নষ্ট হওয়ার বাহানা করে পিছিয়ে যান।
এটা করে করে তারা দেশ, জাতি, মানবতা এবং ইসলামকে আজ একদল ভোট চোর, চাল চোর, তেল চোর, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের হাতে তুলে দিয়েছেন। শুধু তুলেই দেননি বরং এইসব চোরদের তোষামোদ করে করে ইসলামকে ভিক্ষা ও চেয়ে খাওয়ার ধর্মে পরিনত করে ফেলেছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর কাছে গত বছরের মাগনা হজ্জের কাহিনী শোনার পরে মনে হয়েছে, এদেরকে ইসলামের ধর্মীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিলে ইসলামের বিপ্লবী চরিত্রকেই অস্বীকার করা হয়।
আজকে যখন রাষ্ট্র মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে তখন তারা সক্রিয় হয়েছেন। এবং রাষ্ট্রের কাছে মসজিদ খুলে দেয়ার আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।

এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে? স্যেকুলার রাষ্ট্র কতৃক মসজিদ বন্ধ করে দেয়া বা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলাও এতোটা লজ্জাজনক না। কারণ শত্রু পক্ষ তো সেটা করবেই। কিন্তু ইসলামের স্বীকৃত ধর্মীয় নেতারা যখন স্যেকুলার শক্তির কাছে মসজিদ খুলে দেয়ার আকুল আবেদন জানায় তখন আদর্শ হিসেবে ইসলামের কবর রচিত হয়ে যায়।

সারা জীবন রাজনীতিবিমুখ থেকে যে সর্বনাশ তারা করেছে এখন মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত স্যেকুলার শক্তির হাতে দিয়ে এবং এখন মসজিদ খুলে দেয়ার আকুল আবেদন করে তারচেয়েও বড় ক্ষতি করছে।
লড়াই করতে করতে শত্রুর হাতে একবার কেন হাজারবার শহিদ হয়ে যাওয়াও লজ্জাজনক না কিন্তু শত্রুর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে শাসনদন্ড নিয়ে আসাও লজ্জাজনক। এই বোধটুকুও বোধহয় তারা হারিয়ে ফেলেছেন।

তাহলে মসজিদ কি বন্ধই থাকবে?
উলামায়ে কেরাম যদি মনে করেন যে, বন্ধ থাকা দরকার তাহলে বন্ধ থাকবে। আর তারা যদি মনে করেন যে, খোলা থাকবে তাহলে খোলা থাকবে। এই সিদ্ধান্ত কোন স্যেকুলার শক্তির কাছ থেকে নয় বরং উলামায়ে কেরামই নিবেন। যদি তারা এখন মনে করেন যে, খোলা থাকবে তাহলে তারা মসজিদ খুলে দিচ্ছেন না কেন? তালার চাবি কি নাই, তালা কি ভাঙ্গা যায় না?

ইচ্ছে থাকলে তালা কেন লোহার গেট বা দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলা যায়। আমি তালা বা গেট ভেঙ্গে মসজিদ চালু করার কথা বলছিনা। কারণ, আমি মনে করি যে অবস্থা চলছে তা খারাপ না। মসজিদেও জামাত চালু আছে। মানুষের নামাজও হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি এড়ানোই ভালো। কিন্তু আফসোসের জায়গা হলো, উলামায়ে কেরাম এভাবে একটি স্যেকুলার শক্তির ধামাধরা ও আজ্ঞাবহে পরিনত হওয়া।এতে করে ইসলামের আত্মমর্যাদার প্রচন্ড ক্ষতি হচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইসলামের সার্বভোমত্ব নষ্ট হচ্ছে। ইসলাম বৈপ্লাবিক আদর্শের বদলে একটি নীতি-সর্বস্ব ধর্মে পরিনত হচ্ছে।

কোন আদর্শ পরাজিত হওয়ার চেয়ে তার আত্মমর্যাদা হারিয়ে যাওয়া বেশি কষ্টের। পরাজিত শক্তির জয়ী হওয়ার সম্ভবনা থাকে কিন্তু আত্মমর্যাদা হারানো শক্তি আর কোনদিন জেগে ওঠেনা।
ইসলামের জ্ঞানের কিয়দংশ পড়ে যারা বাংলাদেশে ধর্মীয় নেতৃত্বের দাবী করছে তারা বাংলাদেশে ইসলামের আত্মমর্যাদাকেই শেষ করে দিচ্ছেন। ইতিহাসের কাছে এজন্য তাদের জবাবদিহি করতেই হবে।

(বি: দ্র: এটা আমার একান্ত নিজস্ব উপলব্ধি)

লেখক: শেখ ফজলুল করীম মারুফ
সাবেক, কেন্দ্রীয় সভাপতি; ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ad%e0%a7%8c%e0%a6%ae%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%a8%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f/

0 Comments