ফিরে দেখা: ১৮ এপ্রিল ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ি দিবস

দেশ দুনিয়া নিউজ ডেস্ক: ১৮ এপ্রিল ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ি দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ‘রা কোন প্রকার কারণ ছাড়াই অতর্কিতে ঢুকে পড়ে দ্বিপক্ষীয় সীমানার- ১০৬৭/৩ পিলার অতিক্রম করে কুড়িগ্রামের মাটিতে রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পের বাংলাদেশ ভূখন্ডে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বিডিআর ক্যাম্প এলাকার একটি প্রত্যন্ত ভূখন্ড।

বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পসহ আশপাশের গ্রাম তাদের দখলে নিতে এ বর্বরোচিত আক্রমণ মিশন ছিল তাদের। কিন্তু গ্রামবাসী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে আর বিডিআর জোয়ানরা সীমিত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। বাংলাদেশী ভূখন্ডে হানাদার বিএসএফ বাহিনীর গুলীতে শহিদ হয় ৩ বিডিআর। অপরদিকে বিডিআর এর গুলিতে এবং গ্রামবাসির গনপিটুনিতে বিএসএফ অফিসারসহ নিহত হয় ১৩৭ হানাদার সদস্য।

হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দেয় শতাধিক ঘরবাড়ি। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হচ্ছে আব্দুস সামাদ মেম্বার, নিজাম উদ্দীন মুন্সি, হাজী আফাজ উদ্দীন, ময়েজ দেওয়ান, মাহাম্মদ আলী, আব্দুস সালাম, ইদ্রীস আলী, হানিফ উদ্দীন, জাহের আলী প্রমুখ। ঘর ছাড়া হয় সীমান্ত এলাকাসহ আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এতে অনেক নারী তার সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলে। হানাদার প্রতিরোধে বিডিআর জোয়ানদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দেয় এলাকার সাহসী মানুষরা।

সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন ভোর ৫টার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত বিএসএফ‘রা স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক লালমিয়াকে সামনে পেয়ে বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পের কথা জানতে চাইলে সুচতুর লাল মিয়া ক্যাম্পের পরিবর্তে ক্যাম্প সদৃস্য একটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে দেয়। বিএসএফ সদস্যরা বিডিআর ক্যাম্প ভেবে বৃষ্টিরমত গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগুতে থাকে সেদিকে। এরেই ফাঁকে লাল মিয়া দৌড়ে গিয়ে বড়াইবাড়ি ক্যাম্পের বিডিআরদের খবর দিয়ে জানিয়ে দেয় বিএসএফ এর আক্রমণের কথা। বিডিআররা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

এতে যোগ দেয় তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, চিকিৎসক লাল মিয়া মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আব্দুল জববার প্রমুখ। বৃষ্টিরমত গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে বিএসএফ’রা এগুতে থাকলে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে শহিদ হয় ৩৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়ানের সৈনিক ল্যান্স নায়ক ওয়াহিদ মিয়া ও সিপাহী মাহফুজ, ২৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়ানের সিপাহী আব্দুল কাদের। স্থানীয় ছবিরন বেওয়া (৮০), মোস্তফা মুন্সি (৪৫)সহ আহত হয় আরো অনেকে। অপরপক্ষে মারা যায় বিএসএফ অফিসারসহ প্রায় ১৩৭ জন। জেলার রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ি ক্যাম্পে বিডিআর স্বল্পতার তথ্য পেয়ে সিলেটের পাদুয়া অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে জবর দখল করতে গিয়ে বিডিআর জোয়ানদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই তাদের এ আক্রমণ ছিল। কিন্তু তারা প্রতিশোধ নিতে সফল হতে পারেনি বিডিআর জোয়ান ও এলাকাবাসীর সচেতনতা, জীবনবাজি ও তীব্র প্রতিরোধের কারণে। বড়াইবাড়ি ক্যাম্প আক্রমণের কয়েকদিন আগে সিলেটের পাদুয়া দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বড়াইবাড়ির আক্রমণ ছিল তাদরে পরিকল্পিত মিশন। কিন্তু সেখানেও বিডিআর জোয়ানদের কাছে পরাজিত হয় হানাদার বিএসএফ বাহিনী।

এর পরেও থেমে থাকেনি তারা। একের পর এক বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশী কৃষকদের ধরে নিয়ে যায় তারা। গুলী করে নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলাদেশী শিশুসহ বিডিআর জোয়ানের। তারা সব সময়েই আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে চলছে।



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%96%e0%a6%be-%e0%a7%a7%e0%a7%ae-%e0%a6%8f%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b2-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be/

0 Comments