মাওলানা জুবায়ের আনসারি রহ. এর জানাজায় জনতার ঢল : একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ

দেশের এই কঠিন মূহুর্তে মাওলানা জুবায়ের আনসারি (রঃ)-এর জানাজায় জনতার উপচে পড়া ঢল কোন হিসাবেই কাম্য নয়।দেশের এ সংকটকালে এ উপস্থিত শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবেই অপ্রত্যাশীত নয় বরং ইসলামের দৃষ্টিতেও অযৌক্তিক।(এটি আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি)
তবে যারা জনতার এই উপস্থিতিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখা দাঁড় করিয়ে ইসলামপন্থীদের গালমন্দ করছেন তারাও নিরেট নির্বোধ ও মূর্খ। কারণ এই উপস্থিতি চেইন-অব-কমান্ডের ফলাফল নয়। যদি জানাজায় উপস্থিত হওয়ার জন্য জনতাকে আহ্বান করা হতো এবং অফিসিয়ালি ব্যাপক প্রচার করা হতো।তাহলে এ দায় কর্তৃপক্ষের এবং কর্তৃপক্ষ এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারতেন না। কিন্তু জানাজায় উপস্থিতি প্রত্যেকের স্বপ্রণোদিত।
তাই দায় প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কোন গোষ্ঠি বা সমিষ্টির না।

স্থানীয় তথ্য সূত্রে জানতে পারলাম কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কথার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রেখে হযরতের শেষ বিদায়ে কোন প্রাকারের অফিসিয়াল প্রচার করেননি। এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সংক্ষিপ্ত পরিসরে জানাজার আয়োজন করেছে। সে হিসাবে প্রস্তুতিও নিয়েছে।

তাহলে এত লোক আসলো কোথা থেকে??
মুদ্রার এক পিঠে বাঙ্গালী অপর পিঠে আবেগ।অর্থাৎ বাঙ্গালী আপাদমস্তক আবেগী তা নতুন করে বলার কিছু নেই।যার প্রমাণ শুধু এ জানাজায় মিলেছে তা না। তা প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক বঙ্গবন্ধুর খুনির রায় কার্যকর হওয়ার পর আওয়ামীলীগের আনন্দ মিছিলে।
প্রকাশিত হয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সন এর মুক্তি পরবর্তী জনসমুদ্রে।
প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে কাওরান বাজারে কেনা-বেচায় মশগুল থাকা জনতার আবেগে।গার্মেন্টস খোলা-বন্দের খেলায় নাই গেলাম। যারা এ জানাজা সমাপ্ত হওয়ার পরই কলম ধরে ইসলামপন্থীদের গাল দিচ্ছেন এবং তুমুল সমালোচনা করছেন।তারা এই গালি ছোড়াছুড়ি করার আগে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও কেনা-বেচায় ব্যস্ত মিছিলকেও একটা করে

গালি দিয়ে নিয়েছেন কি??
যদি না দিয়ে থাকেন। এখোনি একটা করে গালি ছুড়েঁ মারুন।
অন্যথায় জানাজায় উপস্থিত জনতাকে গালি দেওয়ার নৈতিক অধিকার আপনি রাখেন না।
কারণ যে অপরাধে জানাজায় উপস্থিত জনতা অপরাধী সে অপরাধে আওয়ামীপন্থী মিছিল কারী জনতা, বিএনপিপন্থী স্বাক্ষাত প্রতাশী জনগণ ও নিত্য কাওরান বাজারে ভিড় করা মানুষরাও অপরাধী।
তাই জানাজায় উপস্থিত হওয়া জনতাকে একজন মানুষ হিসাবেই দায় করুন। অহেতুক কাঠ মোল্ল,আবেগী ইসলাম বলে গালি দিয়ে বিদ্বেষ পোষণ থেকে বিরত থাকুন।

উপস্থিত জনতার দায় কার???
সকল মানুষের বিদায় সবার অন্তরে সমান দাগ কাটে না।সবাইকে সমান ব্যথাতুর করেনা।কিছু মানুষ থাকে যারা লক্ষ কোটি মানুষের ভালবাসার একত্রিত সত্ত্বা।জুবায়ের আনসারি( রঃ) এমনই একজন।
এ ধরনের লোকের জানাজার Protection কেমন হওয়া উচিত তা সরকারের জানা থাকার কথা। সরকারে বুঝা উচিত ছিলো অফিসিয়ালি প্রচার না হলেও জনতার উপস্থিতি ঠেকানো যাবে না।
কারণ অনেক সময় ভালবাসার কাছে মৃত্যুও হার মেনে যায়।
যেমন ধরেন। আল্লাহ না করুক।

দেশের সরকার প্রধান,বিরোধী দলীয় নেতা অথবা আল্লামা শফী সাহেব দাঃ এর মত লোক যদি ইন্তেকাল করে। যারা ওনার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী দেশের এ করোনা পরিস্থিতি তাদের নেতৃত্বের শেষ বিদায়ে উপস্থিত থাকার আকুল ব্যাথা কি রুখতে পারবে??বাস্তবেই পারবে না। জনতা করোনা উপেক্ষা করেও উপস্থিত হতে চাইবে।
কিন্তু দেশ ও মানুষ বাঁচাতে হলে এ মুহূর্তে তা রুখতেই হবে।রুখবে কে সরকার না জনগণ??
নিশ্চয়ই সরকার।

তাহলে প্রশাসনের কি করা উচিত।প্রশাসন অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করবে। আগে থেকে জনগণের কাছে বিবৃতি ও সর্তকতামূলক বার্তা পৌঁছাবে,যেন উপস্থিত না হয়।তারপরও জনতা আসতে চাইলে জায়গায় জায়গা আটকে দিবে।এটাই হবে প্রশাসন ও সরকারের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।
কিন্তু বি-বাড়িয়া প্রশাসন মাওলানা জুবায়ের আনসারি (রঃ) আম পাবলিক মনে করছে।তাই অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয় নি। আগাম বিবৃতি ও সতর্কতামূলক বার্তাও জনগণের কাছে পৌঁছায় নি।

এখন প্রশ্ন!!
বি-বাড়িয়া জনতার উপস্থিতর দায় কার? সরকার প্রশাসনের নাকি উপস্থিত জনতার??
যদি জনতাকে দায় নিতে হয়। জনতা দায় নিবে নিজের অতিরিক্ত আবেগের আর সরকার প্রশাসন দায় নিতে হবে দায়িত্ব অবহেলার।

লেখক: শরিফুল ইসলাম রিয়াদ
কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন



source https://deshdunianews.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%93%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b0/

0 Comments